রাজধানীর উত্তরায় ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা দুই বছরের শিশু জাকারিয়া তার মায়ের কোলে ছিল। গার্ডার সরাসরি তার গায়ের ওপর না পড়ায় প্রায় আধাঘণ্টা বেঁচে ছিল সে। তবে শিশুটির পা গার্ডারে চাপা পড়ে। ফলে কেউ তাকে বের করতে পারেননি। একপর্যায়ের মায়ের কোলে মৃত্যু হয় ছোট্ট জাকারিয়ার।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিশু জাকারিয়া তার মায়ের কোলে ছিল। গার্ডারটির চাপ ওর পায়ে পড়লেও মাথা এবং বুক অক্ষত ছিল। তখনো বাইরে তাকিয়ে কাঁদছিল শিশুটি। তাকে বের করার চেষ্টা করা হলেও ক্রেনের চাপে সম্ভব হয়নি।
সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে নির্মাণাধীন বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে।
গার্ডারটি গাড়ির দুই-তৃতীয়াংশ চাপা দেয়। বাম পাশে থাকা দুজন সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। বেঁচে ফেরা হৃদয় ও রিয়া নবদম্পতি। তবে হৃদয়ের বাবা রুবেল মিয়া, বোন ঝরণা বেগম, ফাহিমা আক্তার ও ঝরণার দুই শিশুসন্তান ঘটনাস্থলে মারা যায়।
পুরো ঘটনা নিজের চোখে দেখেছেন সজীব হোসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। তাকিয়ে দেখি- ক্রেন থেকে গার্ডার গাড়ির ওপর পড়লো। দ্রুত সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, কয়েকজন বেঁচে আছে। দুজনকে আমরা বের করি।’
সজীব বলেন, ‘জাকারিয়া নামের শিশুটা ওর মায়ের কোলে ছিল। গার্ডার চাপ ওর পায়ে পড়লেও মাথা এবং বুক অক্ষত ছির। অনেকক্ষণ ধরে বাইরে তাকিয়ে কাঁদছিল বাচ্চাটা। কিন্তু গার্ডার এমনভাবে ওর পায়ের ওপর পড়েছিল যে বের করা সম্ভব হচ্ছিল না। হয়তো পা কেটে ফেললে শিশুটিকে বাঁচানো যেতো।’
‘ফায়ার সার্ভিস এসে উদ্ধারকাজ শুরু করার আগেই শিশু জাকারিয়ার মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা অনেকর চেষ্টার পর গার্ডার গাড়ির ওপর থেকে সরাতে সক্ষম হয়। এরপর কাছে গিয়ে দেখা যায়, শিশু জাকারিয়া তার মা ঝরণার কোলে ছিল। ওভাবেই মা-ছেলের মৃত্যু হয়’ বলেন প্রত্যক্ষদর্শী সজীব।
নিহতদের স্বজন জাহিদ হাসান শুভ বলেন, ‘পুলিশ কল করে আমাদেরকে দুর্ঘটনার কথা জানান। এয়ারপোর্ট থেকে আমরা এসে দেখি, গাড়ি তখনো গার্ডারের নিচে চাপা পড়ে আছে। গার্ডার দ্রুত সরিয়ে আহতদের হাসপাতালে নিলে হয়তো আরও কেউ কেউ বেঁচে যেতেন।’
তিনি বলেন, ‘পুরোটাই প্রজেক্টের লোকজনের গাফিলতি। সাড়ে ৩টায় ঘটনা ঘটছে, কোনো লোক আসেনি। চার ঘণ্টা ধরে এভাবে ছিল। আমি এসে দেখেছি, আমার ভাগ্নে জীবিত, বোনও জীবিত। ওরা শ্বাস নিচ্ছিল। আমার বেয়াই যিনি ড্রাইভ করছিলেন, তারও হাত কাঁপছিল।’
শিশু জাকারিয়ার নানি আকলিমা আক্তার বলেন, ‘আমার নাতিরা মাকে ছাড়া কিছুই বুঝতো না। সারাক্ষণ মায়ের কাছে থাকতো। সেই মায়ের লগেই কোলে বইসা চইল্যা গেলো। আমার সব শেষ..।’
স্বজনরা জানান, ফাহিমা হলেন নববধূ রিয়া মনির মা। আর ঝরণা হলেন তার খালা। রুবেল সম্পর্কে ফাহিমা-ঝরণার বেয়াই। জান্নাত ও জাকারিয়া ঝরণার সন্তান। ফাহিমা-ঝরণাদের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরে। আর রুবেলের বাড়ি মেহেরপুরে।
এদিকে, ক্রেন দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। সোমবার রাতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, কমিটিতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আরবান ট্রান্সপোর্ট অনুবিভাগ) নীলিমা আখতারকে প্রধান করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে একদিনের মধ্যে প্রাথমিক ও দুদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।