বিএনপির মাঠে পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, দলের সিনিয়র নেতাদের মাঠের কর্মসূচিতে ভূমিকা নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ক্ষুব্ধ। তিনি রাজপথে নেতাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে চান। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনে গুটি কয়েক নেতার প্রকাশ্য দেখা যায়। অধিকাংশ নেতাই ২৮ অক্টোবরের পর থেকে কৌশলী ভূমিকায়।
জানা গেছে, এসব নেতাদের ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ে অংশ নেওয়া ছাড়া মাঠের রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিনয়তিই আন্দোলনের গতি হারাচ্ছে। এই নিয়ে চাপে পড়ছে বিএনপি। শরিক দলগুলোর পক্ষে থেকেও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে মাঠের কর্মসূচিতে নজর দেওয়ার বিষয়েও দাবি তোলা হচ্ছে। তাই চলমান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের সক্রিয় অবস্থান চায় দলের হাইকমান্ড।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ভোটের দিন ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত নতুন মোড়কে আন্দোলন করা হবে। এ ছাড়া ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি দেওয়া হবে। এর আগে ১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবসে বিদেশিদের কাছে দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরা হবে।
জানা গেছে, আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি পরিস্থিতি বিবেচনায় জনসম্পৃক্ত কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চায় দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, ‘অবরোধ অব্যাহত থাকবে নাকি অন্য কোনো কর্মসূচি দেওয়া হবে, অথবা অবরোধ বহাল রেখেই আরও কর্মসূচি দেওয়া হবে- নানা বিকল্প নিয়ে দলের ভেতরে আলোচনা চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারবিরোধী অবস্থান নেওয়া সব দলকে এক জায়গায় এনে কী ধরনের কর্মসূচি দেয়া যায়- তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে হামলার প্রতিবাদে ও সরকার পতনের একদফা দাবিতে তিনদফায় চারদিন হরতাল ও ৯ দফায় ১৮ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। গতকাল সোমবার বিএনপিসহ বিরোধী জোটের ৯ম দফায় ডাকা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের শেষদিনের ৭ গাড়িতে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এরইমধ্যে দশম দফায় অবরোধ ডাকা হয়েছে।
এছাড়া অবরোধের সমর্থনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঝটিকা মিছিল করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এছাড়া জামায়াত ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দল ও জোটের নেতারাও বিক্ষোভ মিছিল করেছে। এদিকে মঙ্গলবার বিরতি দিয়ে বুধবার থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ও ১০ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারাদেশে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াত, এলডিপিসহ যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলো।
এদিকে মহাসমাবেশে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর একে একে গ্রেফতার হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহান ওমর (বহিস্কৃত), সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জহির উদ্দিন স্বপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, আমিনুল হকসহ মধ্যম সারির কয়েকজন নেতা।
তবে গত ২৮ ও ২৯ জুলাই ২০২৩ তারিখ হতে অদ্যাবধি বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারাদেশের প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী মোট ২২ হাজার ১৯৬ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার, ৯১২টির বেশি মামলায় ৮১ হাজার ৪৩ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। যদিও প্রথম দিকে গ্রেফতার এড়াতে নেতারা যে আত্মগোপনে চলে গেছেন সেখান থেকে এখনও কেউ সামনে আসছেন না। তবে কর্মসূচি যা পালন হচ্ছে তাতে নতুন কোনো নেতার দেখা মিলছে না।
যুবদলের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘গ্রেফতার এড়ানোর কৌশলের কথা বলে সবাই উধাও হয়ে গেছে। মাঠের কর্মীরা কষ্ট করেও সামনে আসছে। অথচ নেতারা পাশে থাকলে সবাই সাহস পেত।’
অবশ্য এমন পরিস্থিতিতেও সরকার পতন আন্দোলন তরান্বিত করা নিয়ে আশাবাদী নেতারা। ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহ্বায়ক শরিফ উদ্দিন জুয়েল ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কর্মসূচি বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। সরকার পতন আন্দোলন আরও তীব্র করা হবে। সরকারকে পদত্যাগকে বাধ্য করা হবে।’