আর অল্প কিছুক্ষণ পরই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর। কুয়াকাটা যাওয়ার সহজ পথ স্বপ্নের পায়রা সেতু (লেবুখালী ব্রিজ) উদ্বোধন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ১০টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কর্ণফুলী সেতুর আদলে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি উদ্বোধন করবেন তিনি। এদিকে এই পায়রা সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে সেতু এলাকায় এখন উৎসবের আমেজ বইছে। শত শত লোক সেতুর দুই প্রান্তে অবস্থান করছেন। নানান রঙে সাজানো হয়েছে এ সেতুটি এবং সৌর বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে কর্ণফুলী সেতুর আদলে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এই পায়রা সেতুটি। এ উপলক্ষে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী সেতু এলাকায় আয়োজন করা হয়েছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের; যেখানে উপস্থিত থাকবেন বরিশাল বিভাগের সংসদ সদস্যসহ জনপ্রতিনিধিরা, উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতারা।
এই পায়রা (লেবুখালী ব্রিজ) সেতুটি চালু হওয়ায় এই অঞ্চলের মানুষের ফেরি পারাপারের যে ভোগান্তি ছিল, তার অবসান হবে। ঢাকার সঙ্গে পটুয়াখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের নিবিড় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও উন্নতি ও অগ্রগতি হবে এবং পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে। কক্সবাজারের চেয়েও দূরত্ব কমে আসবে সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পৌঁছতে সময় লাগবে মাত্র ছয় থেকে সাত ঘণ্টা। অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে কুয়াকাটা পর্যটনশিল্পের। ইতোমধ্যে দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি এখন একটি বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় মুখর থাকে পায়রা সেতু এলাকার দুই প্রান্ত।
কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর নির্মাণ হয়েছে এ সেতুটি। প্রকল্পে সেতুটির নামকরণ ‘পায়রা সেতু’, কিন্তু স্থানীয়ভাবে বলা হয় ‘লেবুখালী ব্রিজ’। ২০১৬ সালে পায়রা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে মূল সেতুর শতভাগ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। ‘কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট’, ‘ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’ এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বিনিয়োগে প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় সেতুটি। চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘লংজিয়ান রোড অ্যান্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। সৌরবিদ্যুতের আলোতে আলোকিত এখন দৃষ্টিনন্দন এই সেতুটি। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতুর আদলে ফোর লেনে নির্মিত এই সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার। ক্যাবল দিয়ে দুই পাশে সংযুক্ত করা হয়েছে সেতুটি। ফলে নদীর মাঝখানে একটি পিলার ব্যবহার করা হয়। আর পিলারের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ছাড়া খরস্রোতা পায়রা নদীর ভাঙন থেকে সেতু রক্ষায় পটুয়াখালী প্রান্তে ১ হাজার ৪৭৫ মিটার নদী শাসনের কাজও চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে পায়রা সেতু (লেবুখালী ব্রিজ) প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল হালিম জানান, উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সকাল ১০টায় ভার্চুয়াল প্লাটফর্মের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সেতুটি উদ্বোধন শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এ সেতুটি চালু হলে মানুষের ফেরি ভোগান্তির অবসান ঘটবে, মানুষের সময় অপচয় হবে না, দক্ষিণ জনপদের ব্যবসা-বাণিজ্যের উত্তরোত্তর উন্নতি হবে এবং কুয়াকাটা পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে।