বৃহস্পতিবার (২০ মে) থেকে আগামী ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ। মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য প্রতিবছরের মতো এ সিদ্বান্ত নেওয়া হয়েছে। এ সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ ধরার ট্রলার যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর সমুদ্রে মৎস্য প্রজনন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে।
বুধবার (২০ মে) থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। সরকারে নিষেধাজ্ঞার কারণে কক্সবাজার শহরের ফিশারিঘাট ও বাঁকখালী নদীর মোহনায় সারিবদ্ধভাবে নোঙর করে আছে শত শত ফিশিং ট্রলার। ফাঁকে ফাঁকে আরও ট্রলার এসে যুক্ত হচ্ছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সাগর থেকে সব মাছ ধরার ট্রলার উপকূলে নোঙর করবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য দেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ ধরার ট্রলার যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে প্রতি বছর সমুদ্রে মৎস্য প্রজনন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকার এ পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। সংশ্লিষ্ঠরা জানায়, কক্সবাজারের আট উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় ছোট বড় প্রায় ছয় হাজার ট্রলারে লক্ষাধিক জেলে মাছ ধরায় নিয়োজিত রয়েছে। গত দুইমাস ধরে বেশিরভাগ ট্রলার বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এলাকার সমুদ্র মোহনায় নোঙর করে আছে। কারণ সমুদ্রে মৎস্য সংকটের কারণে ট্রলারগুলো মাছ শিকার বন্ধ রেখেছে।
এফবি ফাতেমা নামে একট্রলারের মাঝি মোক্তার আহমদ জানান, সাগরে গত দুই মাস ধরে মাছ পাওয়া যাচ্ছে খুবই কম। এর মধ্যে আবার মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। জানি না কীভাবে পেট চলবে। নুনিয়ারছড়া জেলে পল্লীতে এখন জাল মেরামত ও ট্রলারের মেশিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। পেকুয়ার রাজাখালী এলাকার ছলিমুল্লাহ মাঝি তার দলের ১৫ জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে ঈদ করতে বাড়ি এসেছিলেন। মাছ ধরা বন্ধের আগে একবার সাগরে যাওয়ার চেষ্টা করেও যেতে পারেননি।
তিনি বলেন, কয়েক দফায় সাগরে গিয়ে মাছ না পাওয়ায় ট্রলারের মালিক আগ্রহ দেখায়নি। এতে তারা জাল মেরামত করে সময় পার করছেন।তাদের মতো জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, উখিয়া ও টেকনাফের জেলে পল্লীগুলোতে জাল ও ট্রলার মেরামতের কাজ করে সময় পারবেন জেলেরা। সুবল জলদাশ, মোহন জলদাশ ও হরিসেন জলদাশ নামে কয়েকজন জেলে জানান, বাপ-দাদার দেখানো পথ ধরে মাছ ধরেই তাদের জীবন-জীবিকা চলে। সাগরে মাছ না পেলে তাদের পরিবারে আহার জুটে না। সামনের দিনগুলো কেমন যাবে এনিয়ে তাদের চিন্তার শেষ নেই।
তারা জানান, অভাব-অনটনেই চলে আমাদের সংসার। সরকারি সাহায্যে তো আর পেট ভরে না। গত দুই মাসে সাগরে মাছ কম পাওয়ায় মালিকের (ট্রলার মালিক) কাছ থেকেও অগ্রিম টাকাও নিতে পারছি না। নুনিয়ারছড়ার বাসিন্দা ট্রলার মালিক কফিল উদ্দিন বলেন, একদিকে করোনা সংকট ও অন্যদিকে সাগরে মাছের আকালে পড়ে এর সঙ্গে জড়িত জেলে, মাছ ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেক ব্যবসায়ী ও ট্রলার মালিক ব্যাংক ঋণ ও সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হওয়ার অবস্থা হয়েছে।
কক্সবাজার ট্রলার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ কাইয়ুম বলেন, এ বছর ভরা মৌসুমে সাগরে মাছের আকাল ছিল। এতে বেশিরভাগ ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ী লোকসানে পড়েছেন। জেলেরাও মাছ শিকার করতে না পারায় আর্থিক সংকটে রয়েছেন। ফলে বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সরকারিভাবে জেলেদের পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, জেলায় ৬৩ হাজার ১৯৩ জন জেলের জন্য প্রায় তিন হাজার ৫৩৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। আট উপজেলায় জেলেদের তালিকা অনুযায়ী তা বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সাগরে ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখতে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কেউ এ সময়ে সাগরে গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।