ফাইজার ও সিনোফার্মের টিকা আগামী ১৯ জুন থেকে দেওয়া শুরু হবে । সোমবার (১৪ জুন) মহাখালীতে এক দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বাংলাদেশকে মোট ১১ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা উপহার দিয়েছে চীন। এর মধ্যে ৩০ হাজার ডোজ এ দেশে কর্মরত চীনের কর্মীদের জন্য। বাকি ১০ লাখ ৭০ হাজার ডোজ টিকা দেশের ৫ লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে দেওয়া যাবে।
এ ছাড়া ফাইজারের এক লাখ ৬ হাজার ডোজ টিকা এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) উদ্যোগে কোভ্যাক্স কর্মসূচির মাধ্যমে। কোভ্যাক্স বাংলাদেশকে মোট এক কোটি ডোজ টিকা দেবে। শিগগিরই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ ৮০০ ডোজ টিকা দেশে আসবে।
এদিকে ব্যাধি হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজারের ও চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়া শুরু হবে। তবে ঠিক কোন তারিখ থেকে তা শুরু হবে তা তিনি বলেননি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, ইতিমধ্যে নিবন্ধন করেছেন এমন ব্যক্তিরাই ফাইজার ও সিনোফার্মের টিকা পাবেন। খুব শিগগির নিবন্ধন করা ব্যক্তিদের কাছে মুঠোফোনে বার্তার মাধ্যমে তারিখ জানানো হবে বলেও জানান তিনি। গত ৩১ মে ফাইজার ভ্যাকসিনের এক লাখ ছয় হাজার ডোজের একটি চালান ঢাকায় এসে পৌঁছায়। বৈশ্বিক ভ্যাকসিন সরবরাহ প্রকল্প কোভ্যাক্সের আওতায় এই ভ্যাকসিনগুলো পেয়েছে বাংলাদেশ।
ফাইজার সংরক্ষণ করতে মাইনাস ৬০ ডিগ্রি থেকে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেফ্রিজারেটর দরকার। ২ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা যাবে পাঁচ দিন। আর রেফ্রিজারেটরের বাইরে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা যাবে দুই ঘণ্টা। এবং শূন্য দশমিক তিন মিলিলিটারের সিরিঞ্জ দিয়ে এই ভ্যাকসিনটি দেওয়ার ক্ষেত্রেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন বলে শঙ্কায় আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এছাড়া গতকাল রবিবার (১৩ জুন), চীন থেকে সিনোফার্মের করোনা প্রতিরোধী উপহার হিসেবে আরও ৬ লাখ ডোজ টিকা দেশে পৌঁছায়। আর এর আগে, ৫ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছিল চীন, যা ১২ মে বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়। মোট ১১ লাখ ডোজই চীনের সিনোফার্ম উদ্ভাবিত বিবিআইবিপি-করভি টিকার।
বাংলাদেশ প্রথমে করোনার অক্সফোর্ড উদ্ভাবিত টিকা ব্যবহারের পক্ষে ছিল। এ জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে ৩ কোটি ৪০ লাখ টিকা কেনার চুক্তিও করে। প্রতি মাসে আসার কথা ছিল ৫০ লাখ করে। কিন্তু দুই মেয়াদে ৭০ লাখ টিকা পাঠানোর পর ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় আর কোনো টিকা পাঠাতে পারেনি। কেনা টিকার বাইরে উপহার হিসেবে বাংলাদেশকে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে ভারত।
ন্যায্যতার ভিত্তিতে টিকা বিতরণে গড়ে ওঠা জোট কোভ্যাক্স থেকেও আসার কথা ছিল ৬ কোটি ৭০ লাখ টিকা। পরে জানানো হয় আরও বেশি আসবে। কিন্তু সেখান থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। চলতি মাসের প্রথম দিন কোভ্যাক্স থেকে মাত্র ১ লাখ ৬২০ ডোজ ফাইজারের টিকা এসেছে দেশে।
এই পরিস্থিতিতে টিকাস্বল্পতায় বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচিই বন্ধ হয়ে যেতে চলেছে। এমন অবস্থায় টিকার বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে চীন থেকে ৪ থেকে ৫ কোটি টিকা কেনার চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি দুটি দেশের টিকা দেশে উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।