ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে প্রার্থী হওয়া ও কাজ করায় আওয়ামী লীগ থেকে ৬৫ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জের মাধবপুরে ১৩ ও চুনারুঘাটে সাত, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ১৯, রাজশাহীর পুঠিয়া ও বাগমারায় ১৩, ভোলায় ১০, জামালপুর দুই ও মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে একজন রয়েছে। মাধবপুর ও চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) : মাধবপুর উপজেলায় ১৩ নেতাকে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার বিকালে এ তথ্য জানিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য তাদের নাম পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বরাবর।
বহিষ্কৃতরা হলেন-মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর ইউনিয়নে ফারুক আহম্মদ পারুল, বহরায় আরিফুর রহমান আরিফ ও এহতেশামুল বার চৌধুরী লিপু, আদাঐর ইউনিয়নে তাজুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান হাবিব ও আশিকুর রহমান দুলাল, জগদীশপুরে, মাসুদ খান, নাছির উদ্দিন খান ও আব্দুল জলিল মনু, বুল্লা ইউনিয়নে মিজানুর রহমান মিজান বশির মিয়া ও ছাতিয়াইনে শহীদ উদ্দিন আহম্মদ এবং বাঘাসুরা ইউনিয়নে মিজবাহ উদ্দিন তালুকদার সোয়েব।
এছাড়া চুনারুঘাট উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে প্রার্থী হওয়ায় সাত নেতাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যায় সাতজনকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের তথ্য জানিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য বুধবার সন্ধ্যায় নাম পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বরাবর।
বহিষ্কৃতরা হলেন-চুনারুঘাট উপজেলার ১নং গাজীপুর ইউনিয়নের সাবেক চেযারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মাওলানা তাজুল ইসলাম, ২নং আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল লতিফ, উপজেলা যুবলীগের নির্বাহী সদস্য ও ৩নং দেওরগাছ ইউনিয়নের বিদ্রোহ প্রার্থী মুহিতুর রহমান রুমন ফরাজী।
৪নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামসুজ্জামান শামীম, ৫নং শানখলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী এখলাছ, ৮নং সাটিয়াজুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুর রশিদ মাস্টার, ৯নং রানীগাঁও ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক মো. আনিছ আলী।
গাইবান্ধা : গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ও ১২টি ইউনিয়ন পর্যায়ের ১৯ নেতাকে পদ থেকে অব্যাহতিসহ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাইফুল আলম সাকা স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার এ তথ্য জানানো হয়। এ সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নির্দেশ মোতাবেক ২২ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। দলীয় প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসাবে ওইসব বহিষ্কৃত নেতা ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বহিষ্কৃত নেতারা হলেন-আওয়ামী লীগের কামদিয়া ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান উজ্জ্বল।
কাটাবাড়ী ইউনিয়নের সহসভাপতি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শাখার সদস্য রেজাউল করিম রফিক, শাখাহার ইউনিয়নের সদস্য আবু সাঈদ মো. জাকারিয়া ও মোজাফ্ফর রহমান সরকার বিএসসি, রাজাহার ইউনিয়নের অর্থবিষয়ক সম্পাদক মো. তারিক রিফাত ও সদস্য মো. রেজাউল করিম, সাপমারা ইউনিয়নের সদস্য তোফাজ্জল হোসেন সরকার, দরবস্ত ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মন্ডল ও সদস্য মো. আব্দুল হালিম, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা শাখার সহসভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান নজমু ও সদস্য কাজী মো. সামিউল ইসলাম, তালুককানুপুর ইউনিয়নে উপজেলা শাখার সহসভাপতি মো. আব্দুর রহমান খন্দকার, নাকাইহাট ইউনিয়নের সহসভাপতি মো. সাজু খন্দকার ও সদস্য আব্দুল কাদের প্রধান, শিবপুর ইউনিয়নে উপজেলা শাখার সাংগঠনিক মো. তৌহিদুল ইসলাম প্রধান, মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম প্রধান, শালমারা ইউনিয়নের সহসভাপতি মো. আইয়ুব আলী ও মো. রাসেল মোশারফ এবং কামারদ ইউনিয়নে উপজেলা শাখার সদস্য সৈয়দ শরিফুল ইসলাম।
রাজশাহী : পুঠিয়া ও বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৩ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা বিভিন্ন ইউনিয়ন কমিটির বিভিন্ন পদে ছিলেন। বহিষ্কৃতদের অন্যতম পুঠিয়ার বেলপুকুর ইউনিয়নের সভাপতি বদিউজ্জামান বদিকে দল ও পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বদি বেলপুকুর ইউনিয়ন নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। বাগমারা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ১২ বিদ্রোহীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক সভায় তাদের বহিষ্কার করা হয়।
বহিষ্কৃতরা হলেন বাসুপাড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুর জব্বার মণ্ডল, নরদাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রশিদ মাস্টার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও কাচারী কোয়ালিপাড়া ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মোজাম্মেল হক, হামিরকুৎসা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাফিনুর নাহার, যোগীপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাজেদুল ইসলাম সোহাগ, আউচপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পরিবেশ সম্পাদক আব্দুর রহিম, ঝিকড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম, দ্বীপপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বিকাশ কুমার ভৌমিক, গণিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হারুন অর রশিদ এবং মাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল হক।
ভোলা : ভোলায় সদর উপজেলার ১০ জনকে আওয়ামী লীগ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার দলের এক বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্তের পর উপজেলা আওয়ামী লীগ সম্পাদক নজরুল ইসলাম গোলদার স্বাক্ষরিত বহিষ্কার আদেশ চিঠির কপি বুধবার সাংবাদিকদের দেওয়া হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল ইসলাম জানান, প্রথমে উল্লিখিত ১০ জনসহ ২৫ জনকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। ৮ জন দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। দুজন যুবলীগের পদে থাকায় তাদের বিষয় শিগগিরই যুবলীগ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রথমে পদে থাকা ও দলের সাধারণ সদস্য পদ থেকেও আজীবনের জন্য এদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
এরা হচ্ছেন পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান মো. গিয়াস উদ্দিন ও একই কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. নুরনবী মাস্টার, রাজাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. রেজাউল হক মিঠু চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা মিয়া মো. সিরাজ উদ্দিন (মিয়া সিরাজ), একই ইউনিয়নের বাসিন্দা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন ছোটন, ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, শিবপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম রাকিব, ওই ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. সেলিম, ভেদুরিয়া ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক-১ মোসলেউদ্দিন পাটোয়ারী ও উত্তর দিঘলদী ইউনিয়নের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য তাজুল ইসলাম হাওলাদার।
জামালপুর : সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সহসভাপতি ফরিদ আহম্মেদ ও অর্থবিষয়ক সম্পাদক শাহিনুর রহমানকে যুবলীগ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. এরশাদ হোসেন সোহেল ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম খোকন বুধবার এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।
শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) : শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও বিদ্রোহী পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেন সেন্টুকে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. লুৎফর রহমানের স্বাক্ষরিত এক চিঠি সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।