আওয়ামী লীগের চার শতাধিক তৃণমূল কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন কমিটিগুলোর সম্মেলন না হওয়ায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। এর ফলে নেতৃত্বপ্রত্যাশীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল দেখা দিয়েছে। এই অবস্থায় দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ ৪৩টি সাংগঠনিক জেলাসহ চার শতাধিক বিভিন্ন কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করতে চলতি মাসেই তৃণমূল সফরে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
আর এই সফরসূচি চূড়ান্ত করতে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সভা আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যথাসময়ে উপস্থিত থাকার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আট বিভাগে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৪৩টিতে এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ১৫টি, চট্টগ্রামের সাতটি, ময়মনসিংহের পাঁচটি, রাজশাহীর চারটি, বরিশালের চারটি, রংপুরের তিনটি, খুলনার চারটি এবং সিলেট বিভাগের একটি সাংগঠনিক জেলা। অন্যদিকে সারা দেশে আওয়ামী লীগের উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটির সংখ্যা প্রায় ৬৫০টির মতো। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৬০টি, চট্টগ্রামে ১২৯টি, রাজশাহীতে ৮৩টি, খুলনায় ৭৪টি, রংপুরে ৬৬টি, বরিশালে ৫৩টি, সিলেটে ৪৯টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৯টির মতো কমিটি রয়েছে। এসব কমিটির মধ্যে এখনো ৩৫৭টি কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ।
কোথাও কোথাও ২০-২২ বছরেও সম্মেলন হয়নি। কয়েক হাজার ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটির মধ্যে ঠিক কতগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ, সেই পরিসংখ্যান দলের কাছেও নেই। এছাড়া সম্মেলন হওয়া কমিটির অর্ধেকের বেশি পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। গত ৯ সেপ্টেম্বর গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন দ্রুত সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে দ্বন্দ্ব, কোন্দল নিরসন করে তৃণমূল চাঙ্গা করা, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ, ইশতেহার প্রণয়ন, সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ নানা নির্দেশনা দেন। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের বসে যেখানে যেখানে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল আছে তা দ্রুত নিরসনের নির্দেশনা দেয় দলের হাইকমান্ড।
২০১৯ সালের ২০-২১ ডিসেম্বর দলের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের আগে-পরে ৩৫টি জেলা এবং ১৯৩টির মতো উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটির সম্মেলন হয়। করোনার কারণে ৮ মার্চ থেকে তৃণমূল সম্মেলন বন্ধ হয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা সহনীয় হওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১০ ডিসেম্বর জয়পুরহাট জেলার সম্মেলন হয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে তৃণমূল সম্মেলনসহ জনসমাগমের কর্মসূচি বন্ধ রাখা হয়। বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ ৪৩টি জেলার তিন বছরের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে এক থেকে পাঁচ বছর আগে।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর পাঁচ জন সদস্য ইত্তেফাককে জানান, ঝিমিয়ে পড়া সাংগঠনিক শক্তি চাঙ্গা, সারা দেশে দ্বন্দ্ব-বিভেদ মিটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা, রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষের সম্ভাব্য আন্দোলন রাজপথে মোকাবিলা, আগামী জাতীয় সম্মেলন সামনে রেখে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন দ্রুত সম্পন্ন, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে দলের প্রার্থীদের বিজয়ের ধারা বজায় রাখা এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীসহ জনগণকে সচেতন করা—সুনির্দিষ্ট এই ছয়টি ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে চলতি মাসেই মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে দলকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়েই মাঠে থাকবে ইতিপূর্বে গঠিত দলের শক্তিশালী আট বিভাগীয় কেন্দ্রীয় আট সাংগঠনিক টিম। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু করার আগে তৃণমূল শক্তিশালী করে ঢেলে সাজাতে দেশের আটটি বিভাগের জন্য পৃথক আটটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং আট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের সমন্বয়ে গঠিত সাংগঠনিক এই টিমগুলো কাজে নামতে পারেনি।