শত ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূলতা কাটিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে পদ্মা সেতু। এ সেতু দেশের মানুষের উন্নয়নে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা তুলে ধরে দেশ ও জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিনটি স্মরণীয় করতে ১০ লক্ষাধিক লোকের জনসভা করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ। জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করার মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তি যেমন প্রদর্শন করা হবে আবার আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে একটি বার্তাও দিতে চায় সরকার। আর এ বার্তাটি হচ্ছে, আওয়ামী ক্ষমতায় থাকলেই দেশের মানুষের কল্যাণ হয় এবং রাষ্ট্রের উন্নতি হয়। মূলত উদ্বোধনী জনসভায় ব্যাপক জনসমাবেশের মধ্যে দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণাও শুরু করবে ক্ষমতাসীন দলটি। দেখাবে জনসমর্থনের শক্তি।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, পদ্মা সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সক্ষমতার প্রতীক। তিনি শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়িয়েছেন।
পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার আরেকটি বিজয়, যা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। এর প্রতিদান আগামী নির্বাচনে নিশ্চয় দেশের জনগণ প্রধানমন্ত্রীকে দিবে। সামনে যেহেতু জাতীয় নির্বাচন, তাই যেকোনো সভা-সমাবেশে প্রচারণা তো থাকবেই।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আন্তর্জাতিক চক্রান্তকে পরাজিত করে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেখ হাসিনার আরেকটি বিজয়। এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জনসমাগম হবে ১০ লাখের বেশি। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বিদেশ থেকেও অনেকে চলে এসেছেন। তবে এবারের জনসমাগম জনসমুদ্রে পরিণত হবে। তিনি বলেন, এ সেতুর মাধ্যমে দেশের মানুষের বিশেষ সম্ভাবনা রয়েছে। বহু মানুষের ভাগ্যের চাকার সঙ্গে জড়িত হবে পদ্মা সেতুটি। এই সেতুর সম্ভাবনা দৃশ্যমানের ফলে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পারে অসম্ভবকে সম্ভব করতে। আগামী নির্বাচনে নিশ্চয় বাংলার জনগণ এর পুরস্কার নেত্রী শেখ হাসিনাকে দিবে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন মূলত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মহড়া দেবে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ২৫ জুনের পর থেকে দলটির নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং এবং দলীয় কর্মসূচিতে যুক্ত পদ্মা সেতু। দ্বাদশ নির্বাচনের প্রচারণায় উপরের দিকেই থাকবে দেশের সর্ববৃহৎ এ সেতু।
এ উপলক্ষে সরকার ও দল থেকে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ পরিকল্পনা। জনসভার পর ফানুস ওড়ানো, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নদীতে সুসজ্জিত নৌকা এবং সাজানো হবে নদীর দু-পাড়। দলটির নেতাদের প্রত্যাশা-শুধু পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের মানুষই নয়, উদ্বোধনের দিন সারা দেশের মানুষ এই উৎসবে অংশ নেবে। এ উপলক্ষে দেশের জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দলীয় নেতাকর্মীরা আনন্দ মিছিল, শোভাযাত্রা, আতশবাজিসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনন্দ উৎসব করা হবে। এর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতুসহ বিগত দিনের আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে ভোটারদের কাছে।
বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাধারণ ভোটারদের ওপর আলাদা দৃষ্টি থাকবে- এ অঞ্চলের ২১ জেলার মোট ৭৬টি সংসদীয় আসনের ভোটারদের আকৃষ্ট করতে। কারণ পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক এঅঞ্চলগুলো হতে পারে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক। তাই দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন মান উন্নয়ন এবং নানামুখী সুযোগ-সুবিধা নিয়ে জনসভায় বক্তব্য রাখতে পারেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া এ অঞ্চলের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ফের নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাতে পারেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
দলের শীর্ষ নেতাদের মতে, দ্বাদশ নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠছে বিএনপি-জামায়াতসহ সরকারবিরোধীরা। তারা আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত। তাদের টার্গেট গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে গিয়ে সরকারের পতন ঘটানো। এ জন্য দেশ-বিদেশে ষড়যন্ত্রে ব্যস্ত তারা। এমন অবস্থায় পদ্মা সেতু উদ্বোধন জনসভার মধ্যে দিয়ে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি প্রদর্শন করতে চায় আওয়ামী লীগ।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনে ১০ লক্ষাধিক লোকের জনসভা নির্বাচনী প্রচারের বার্তা কি-না? এমন প্রশ্নের জবাবে দলের আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে ভাবেন। দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা নিয়ে চিন্তা করেন। আগামী দিনে এই বাংলাদেশকে আরো উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দিকে কিভাবে নিয়ে যাওয়া যায় তা নিয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বলেন, জনসভা লাখ লাখ লোকের জনসমুদ্রে পরিণত হবে। সেখানে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন, দেশের অর্থনীতি ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখবেন।
সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে খুবই জমকালো। মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ৬৪টি জেলাতেও দেখানোর ব্যবস্থা থাকবে।