আমলাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র কাজ করছে কি না— তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা। দলটির নেতারা বলছেন, আমলাদের বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।
গত ২৬ ও ২৭ মার্চ হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী অভিযোগ করেন, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় তাণ্ডবের ঘটনা ঘটেছে। পরে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবসরে এবং সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়।
এদিকে, গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার রয়েল রিসোর্টে হেফাজত নেতা মামুনুল হককে আটকে রাখার ঘটনায় সংগঠনটির নেতাকর্মীরা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। ওই ঘটনার দুদিন পর ৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ সময় স্থানীয় নেতাকর্মীরা প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনে জামায়াত-বিএনপির অনুসারীরা সরকারকে বিতর্কিত করতে কাজ করছে। এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে সামনে এমন ঘটনা আরও বাড়বে। সরকার ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য তারা কাজ করবে।
এদিকে, গত ১৭ মে সচিবালয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রেখে মামলা দেওয়া হয় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে। এ সময় তাকে হেনস্তা, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের। টানা পাঁচ দিন কারাগারে থাকার পর রোববার তাকে জামিন দেওয়া হয়। এদিনই তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিভিল ও পুলিশ প্রশাসনে কিছু কর্মকর্তা সরকারকে বিতর্কিত ও বিব্রত করতে কাজ করছে। সামনের দিনে এমন ঘটনার সংখ্যা আরও বাড়বে। সরকার ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য তারা কাজ করবে। এটা তাদের অ্যাসাইনমেন্ট। এখন জামায়াত-বিএনপি রাস্তায় নেই। কিন্তু আমলাতন্ত্রে জামায়াত-বিএনপির যেসব অনুপ্রবেশকারী রয়েছেন তারা নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের প্রয়াস চালাচ্ছেন।
দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নিয়ে কিছু বলার সুযোগ নেই। এটি এখন আদালতের বিষয়। তবে, যারা অপকর্ম করে অথবা দুর্নীতি করে, দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে তাদের বাড়াবাড়িতে এসব ঘটনা ঘটছে। যারা এসব ঘটনা ঘটাল তারা কখনোই শেখ হাসিনা সরকারের শুভাকাঙ্ক্ষী বলে আমরা মনে করি না।
তিনি আরও বলেন, এসব কর্মকাণ্ডের ভেতর দিয়ে দেশবাসীর কাছে এবং বিশ্ববাসীর কাছে শেখ হাসিনার সরকারকে বিতর্কিত করার কোনো ষড়যন্ত্র আছে কি না— বিষয়টি খতিয়ে দেখার দরকার বলে আমি মনে করি।
দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, প্রত্যেকটি ঘটনার তদন্ত হচ্ছে। তদন্তে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সোনারগাঁ ও সচিবালয়ের ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। আগামীতেও তা-ই হবে।