‘আমার ছেলেকে কি বাঁচাতে পারবো না? আমার ছেলে বাঁচবে তো? আমার বাবাকে এখন কই নিয়ে যাবো? আমার ছেলেকে বাঁচান।’ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে এভাবেই আকুতি জানাচ্ছিলেন রিনা বেগম নামের এক মা। তার ২৪ বছর বয়সী ছেলে মেহেদী হাসান হৃদয় পাশেই একটি এম্বুলেন্সে শ্বাসকষ্ট নিয়ে কাতরাচ্ছিলেন। কুমিল্লা থেকে আসা এই রোগীর আইসিইউ প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও এখানে কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই। চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়েছেন যেখানে আইসিইউ সুবিধা আছে সেখানে নিয়ে যেতে। এই অবস্থায় অসহায় রিনা বেগম ছেলেকে নিয়ে কোথায় যাবেন এনিয়ে পেরেশান। আকুতি জানাচ্ছিলেন তাকে সহযোগিতা করার। ছেলের জন্য একটা আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা করে দেন।
রিনা বেগম বলেন- রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ। এখন ছেলেকে নিয়ে মহাখালী হাসপাতালে যাবো। আইসিইউতে নেয়া ছাড়া ছেলেকে বাঁচানো যাবে না। তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে মেহেদী বড়। ঈদের এক সপ্তাহ পর বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল তার। কাগজপত্র সবকিছু তৈরি। এদিকে হাসপাতালের সামনে দুপুরের পরপর আরও কয়েকজন শ্বাসকষ্টের রোগীকে দেখা যায় আইসিইউ বেড না পেয়ে অন্যান্য হাসপাতালে যাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে শ্বাসকষ্ট নিয়ে এসেছেন রুস্তম আলী (৩৭)। তিনদিন ধরে বুকে ব্যথা ও জ্বর। হাসপাতালের সামনে এম্বুলেন্সের ভিতরে বসে অসুস্থ রুস্তম আলীকে বাতাস করছিলেন বড় ভাই রহিম মিয়া। তিনি বলেন, হঠাৎ ভাইয়ের বুকে ব্যথা ও জ্বর। কোনো কিছু চিন্তা না করে শনিবার রাতে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসি। তার আগে থেকেই ফুসফুস ও হার্টের সমস্যা ছিল। এখানে তাকে সাধারণ ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। রাত থেকে তার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। চিকিৎসকরা তিনদিন ধরে করোনা পরীক্ষা করানোর কথা বলে আর খবর রাখেননি। তাদের কোনো আইসিইউও খালি নেই। এদিকে রোগীর অবস্থা খারাপ হচ্ছে। পরিবারের সবাই চিন্তা করে তাকে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাচ্ছি।
ঘণ্টা দু’য়েকের মধ্যে হাসপাতালের সামনে এসে রোগী নিয়ে আরেকটি এম্বুলেন্স প্রবেশ করে। ভিতরে দেখা যায় একজন মধ্য বয়সী নারী। মুখে অক্সিজেন মাস্ক দেয়া। ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছিলেন। এই রোগীর নাম রাবেয়া খাতুন। তিনি বগুড়া থেকে এসেছেন। সঙ্গে থাকা তার স্বজন জানান, সোমবার থেকে তার শ্বাসকষ্ট দেখা যায়। শরীরে কোনো ধরনের জ্বর ও সর্দি ছিল না। বগুড়ার একটি হাসপাতালে তাকে দেখানো হয়। ডাক্তার করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা নেন। করোনা পজিটিভ আসায় তাকে ঢাকাতে নিয়ে আসি। তবে আগে থেকে তার ডায়াবেটিসের সমস্যা ছিল। ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিলে তারা অন্য কোনো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। এখন অন্য হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হচ্ছে।