চারজনের কারোরই বাক ও শ্রবণশক্তি নেই। তার ওপর তাদের সবাই বুদ্ধি প্রতিবন্ধীও। জন্মগতভাবেই অন্য সব স্বাভাবিক মানুষের মতো জ্ঞান-বুদ্ধি নেই তাদের। যা তাদের পরিচিতি দিয়েছে অটিস্টিক বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু হিসেবে। তবে এই চার মেয়ের স্নায়বিক শক্তি প্রচন্ড। শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এসব শিশুরা গ্রাম্য সামাজিক ব্যবস্থায় অনেকটা ‘অচ্ছুৎ’। কিন্তু তারাই এবার স্পেশাল অলিম্পিকে দেশকে এনে দিলেন স্বর্ণপদক।
বলা হচ্ছে- মৌলভীবাজারের মাহিমা আক্তার, তানিয়া আক্তার সুমাইয়া, রিয়া রানী দাশ ও মহিমা খাতুন মীমের কথা। জার্মানির বার্লিনে অনুষ্ঠিত স্পেশাল অলিম্পিকের তিনটি ইভেন্টে নিজেদের অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তারা। যার মাধ্যমে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে দু’হাত ভরে সাফল্য নিয়ে এসেছেন।
মেয়েদের এফ ওয়ান ফ্রিস্টাইলে দলীয়ভাবে স্বর্ণ জেতেন মাহিমা আক্তার এবং তিন সহযোগী প্রতিযোগি। সুমাইয়া স্বর্ণ জিতেছেন ১০০ মিটার দৌড়ে। এছাড়া থ্রি-সেভেন এ সাইড ফুটবলের ফাইনালে শক্তিশালী ইসরায়েলকে হারায় বাংলাদেশ। স্বর্ণজয়ী সেই দলে ছিলেন জেলার দুই প্রতিযোগী রিয়া রানী ও মহিমা খাতুন।
তাদের এমন অর্জনে মৌলভীবাজার-৩ এর সংসদ সদস্য নেছার আহমদ বলেন, ‘বিদেশের মাটিতে স্বর্ণজয়ী চার মেয়ে আমাদের গর্ব। কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতাই তাদের ভেতরের মেধাশক্তিকে আটকে রাখতে পারেনি।’
মাহিমা-তানিয়াদের ব্লুমিং রোজেস বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মল্লিকা রানী গোস্বামী বলেন, ‘তারা আমাদের মুখ উজ্জল করেছে। সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিচর্যা পেলে প্রতিবন্ধী শিশুরাও সমাজের বোঝা নয়, বরং তারাও অহংকার হতে পারে সে প্রমাণ মাহিমা, সুমাইয়া, রিয়া ও মীম। তাদের নিয়ে আমরা গর্বিত।’
গত ১৭-২৫ জুন পর্যন্ত বার্লিনে অনুষ্ঠিত এই অলিম্পিকে বাংলাদেশ থেকে ৭৯ জন খেলোয়াড় অংশ নেন। তাদের মধ্যে ছিলেন মৌলভীবাজারের চার অ্যাথলেট। সোমবার (১৭ জুলাই) তাদের এমন সাফল্যের জন্য স্কুলের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। চারজনই স্কুলটির ভোকেশনাল শাখার শিক্ষার্থী।