রাজধানীর ওয়ারী থানার অর্থ পাচার আইনের মামলায় ক্যাসিনো কাণ্ডে আলোচিত পুরান ঢাকার দুই ভাই এনামুল হক ভূঁইয়া ওরফে এনু ও রুপন ভূঁইয়াসহ ১১ জনের সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার (২৫ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন। এর আগে গত ৬ এপ্রিল মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য থাকলেও বিচারক ছুটিতে থাকায় তা পিছিয়ে ২৫ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়। এর আগে গত ১৬ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের এ তারিখ ধার্য করেন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন- মেরাজুল হক ভূঁইয়া শিপলু, রশিদুল হক ভূঁইয়া, সহিদুল হক ভূঁইয়া, পাভেল রহমান, তুহিন মুন্সি, আবুল কালাম আজাদ, নবীর হোসেন শিকদার, সাইফুল ইসলাম ও জয় গোপাল সরকার। আসামিদের মধ্যে শিপলু, রশিদুল, সহিদুল ও পাভেল মামলার শুরু থেকে পলাতক। তুহিন জামিনে আছেন। অপর ৬ আসামি কারাগারে আছেন। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি ভোরে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকায় এনু-রুপনকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২২টি জমির দলিল, পাঁচটি গাড়ির কাগজপত্র ও ৯১টি ব্যাংক হিসাবে ১৯ কোটি টাকা থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়াও তাদের কাছ থেকে নগদ ৪০ লাখ টাকা ও ১২টি মোবাইল জব্দ করা হয়।
মামলার এজাহারে সূত্রে জানা গেছে, এনামুলের আয়কর নথি, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তার বৈধ আয়ের কোনো উৎস নেই। তিনি ক্যাসিনো ব্যবসাসহ অবৈধ উপায়ে আয় করা অর্থ দিয়ে প্রচুর সম্পদ অর্জন করেছেন। এসব তার আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। তিনি অবৈধ আয়ের মাধ্যমে দেশে–বিদেশে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছেন।
জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের ক্যাসিনো খেলা পরিচালনাকারী এনুর কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের বাসায় ক্যাসিনো থেকে উপার্জিত টাকা উদ্ধারের জন্য ওয়ারীর লালমোহন সাহা স্ট্রিটের বাড়ি ঘেরাও করে র্যাব। কালামের স্ত্রী ও মেয়ের দেখানো মতে ৪র্থ তলার বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে দুই কোটি টাকা উদ্ধার করে র্যাব। আসামিরা জেনে-বুঝে অবৈধ প্রক্রিয়ায় উপার্জিত অর্থ আড়াল করার জন্য গোপনে কালামের কাছে রাখে। কালাম তা গ্রহণ করে নিজের কাছে রাখে। যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অপরাধ। এ ঘটনায় র্যাব-৩ এর পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যান) জিয়াউল হাসান ওয়ারী থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
২০২০ সালের ২১ জুলাই মামলাটি তদন্ত করে এগারো জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক মোহাম্মদ ছাদেক আলী। ২০২১ সালের ৫ জানুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। মামলাটির বিচার চলাকালে আদালত ২০ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।