অর্থনৈতিক দুরবস্থা কাটাতে সরকারের পদত্যাগ চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, এই সরকারের বিদায়ের পর যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক সমস্যা দ্রুত সমাধান করা হবে। সরকারের পতন ছাড়া এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। তারা এতো বেশি দুর্নীতি পরায়ণ হয়ে গেছে যে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছে।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনীতি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের লাগামহীন দুর্নীতি অপরিণামদর্শী ভ্রান্ত নীতি ও চরম অব্যবস্থাপনার মাসুল দিতে গিয়ে রেকর্ড মূল্যস্ফীতি ও আর্থিক সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত।
তিনি বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য আর্থিক খাতের সংস্কার সাধন অত্যাবশ্যক। টেকসই অর্থনীতির প্রয়োজনে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা দরকার। কর-শুল্ক, আর্থিক খাত, ব্যাংকিং সেক্টর, বাজেট ব্যবস্থাপনা এবং বাণিজ্যনীতির সংস্কার আবশ্যক। এজন্য প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত আইনের শাসন এবং প্রকৃত অর্থেই জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি আশা করে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আর্থিকখাতে কার্যকর সংস্কার সাধনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আইএমএফ বিশেষ সহযোগিতার হাত বাড়াবে।
ফখরুল বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণে সরকার আন্তরিক নয়- আইএমএফ চাচ্ছে সরকারি ব্যাংকগুলোতে ১০ শতাংশের নিচে ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে ৫ শতাংশের নিচে থাকুক খেলাপিঋণের পরিমাণ, আগামী জুন থেকেই তা দৃশ্যমান করতে হবে। পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে ২০২৬ এর মধ্যে। কিন্তু সরকার খেলাপিঋণ আদায়ে বাস্তব, কার্যকর ও ফলপ্রসূ‚ পদক্ষেপ না নিয়ে যতসব ‘অদ্ভুত উপায়ে’ খেলাপিঋণ কমানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে। এটা এক ধরনের ‘আই ওয়াশ’। কৌশলে এক ব্যাংকের আদায়যোগ্য খেলাপিঋণ আরেক ব্যাংকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। আবার বড় বড় ব্যবসায়ী গ্রুপের খেলাপিঋণ পুনঃঅর্থায়ন ও পুনঃতফসীলিকরণের মাধ্যমে নবায়ন করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে ব্যাংক থেকে ঋণ অবলোপনের নীতিমালা আরও শিথিল করেছে। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা ছাড়া খেলাপিঋণ কমানো সম্ভব নয়। আইএমএফএর ঋণ প্রাপ্তির শুরুতেই এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, ঋণ খেলাপি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সরকার আন্তরিক নয়।
অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ খেলাপিঋণ নিয়ে বলেছেন, ‘কাগজে সই করলেই তো খেলাপিঋণ কমে যাবে না। এর জন্য দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছার।’ বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে দেশের অবস্থা আজ এমন শোচনীয় অবস্থায় যেত না। অনেকে মনে করেন আইএমএফের ঋণে সংকট কাটবে না। এই ঋণ বরং আলিগার্কদের পেটে যাবে, কষ্ট বাড়বে সাধারণ জনগণের। ব্যাংকিং ও রাজস্ব খাতের সংস্কার এবং নীতি সংস্কার করে খেলাপিঋণ পুনরুদ্ধার না করলে, শক্তভাবে দুর্নীতি ও অর্থপাচার রোধে ব্যর্থ হলে যে সূত্র হতেই ঋণের টাকা আসুক নানা কৌশলে শেষ পর্যন্ত অলিগার্করাই বরং তা লুণ্ঠন করে নেবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশে চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট একটি জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে। এই দুর্বিষহ জাতীয় সংকট থেকে মুক্তি পেতে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে এই অবৈধ সরকারকে হটানোর জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবী আদায়ে দুর্বার গণ-আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, পতন ঘটাতে হবে বর্তমান গণবিরোধী নিশিরাতের ভোটডাকাত সরকারের। প্রতিষ্ঠা করতে হবে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, যার অধীনে এদেশের তরুণ প্রজন্মসহ সমগ্র জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে দেশনায়ক তারেক রহমান ঘোষিত ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের’ ২৭ দফা বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত জাতীয় সরকার গঠন করবে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনে বিজয়ের মাধ্যমে আগামী দিনে দেশের চলমান আর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট দূরীভূত করা সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ ও সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ।