দেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন এসেছে ব্যাপক। রাস্তাঘাট, ব্রিজ, সেতু বড় প্রজেক্ট পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, পাতাল সড়ক অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি সদরঘাটের খেটে খাওয়া কুলিদের গায়ে। বরং উন্নয়নের মহা প্রজেক্ট যেন ভাগ্যের চাকায় কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অনেক পরিবর্তন আসলেও কুলিদের জীবন অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। কাজে না আসলে সংসারের চাকা যে ঘোরে না তাদের।
সদরঘাটে ২৫ বছর ধরে কুলির কাজ করেন মোহাম্মদ আনিস। একদম ছোটবেলা থেকে এখানে কাজ শুরু করেন তিনি। দিনবদলের সকল কার্যক্রমের সাক্ষী এই আনিস। বছর দুয়েক আগেও দিনে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করতেন তিনি। এখন সেটা নেমে এসেছে ৪০০ টাকায়। কারণ হিসেবে আনিস জানান, আগে সদরঘাটে যে পরিমাণ লোক আসতো তার অর্ধেকও আসে না এখন। আয় বর্তমানে আগের তুলনায় পুরোটাই কমে আসছে।
এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেন ৫০ বছর বয়সী মিলন মিয়া। বয়স ৫০ হলেও ৩০ বছর ধরে এই সদরঘাটে কুলির কাজ করছেন। মিলন বলেন, ট্রেন ছিল না, ব্রিজ ছিল না তাই সদরঘাটমুখী হওয়ায় যাত্রীর সংখ্যা বেশি ছিল। পদ্মা সেতু হওয়ায় তাদের ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে যাত্রী কমে গেছে। আগের তুলনায় অর্ধেক যাত্রী এখন। আগে থেকে শ্রমিকের পরিমাণ বেড়েছে। ইজাদারদের অর্ধেক টাকা দিতে হয়। তাছাড়া ঘাটের শ্রমিকের কারণেও কুলিদের আয় রোজগারে ভাগ বসেছে।
সেলিম মিয়া ২৫ বছর ধরে কুলির কাজ করছেন সদরঘাটে। অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আগের মতো কামাই নাই সদরঘাটে। এক ঘণ্টা কাজ করলে তিন ঘণ্টা বসে থাকা লাগে। যাত্রী আসে না কামাই থাকবো কেমনে।’
যাত্রী না আসার পেছনে কারণটা জানতে চাইলে তারা জানান, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে অধিকাংশ লোক এখন গাড়ি করে বাড়ি চলে যায়। তারা এখন ভিড় জমাতে সদরঘাটে আসেন না। ফলে এখানকার কুলিরা আগের মতো রোজগার করতে পারছেন না। অর্থনৈতিক পরিবর্তন এসেছে কিন্তু কুলিদের ভাগ্যের পরিবর্তন আসেনি।
সদরঘাটে প্রায় শতশত কুলি কাজ করে। এদের অধিকাংশই ঢাকার বাহির থেকে আসা। পরিবারের মুখে হাসি ফোটাবেন, সংসার চালাবেন এমন স্বপ্ন নিয়ে বাড়ি থেকে এসেছিলেন। সেই স্বপ্ন হাতছানি দিয়েছে। ভাগ্যের পালাবদলে আয় এসেছে কমে। কেউবা কাজ ছেড়ে দিয়েছেন, কেউ দীর্ঘদিনের পেশা ছাড়তে পারেননি। তবে তাদের মজুরি কখনো নির্ধারিত হয়নি। আশা করছেন ভাগ্যের চাকায় আবারও আলো জ্বলবে।