অনিয়মিত অভিবাসীদের ঠেকাতে পূর্ব সীমান্তে ১০ হাজার সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পোল্যান্ড। এর মধ্যে রয়েছে সীমান্ত পুলিশের চার হাজার সদস্য। ওয়ারশ ও মিনস্কের মধ্যে চলমান তীব্র উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে পোলিশ কর্তৃপক্ষ।
পোলিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মারিউস ব্লাসজ্যাক বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) ঘোষণা করেছেন, সীমান্তে শক্তি বাড়ানোর অংশ হিসেবে বেলারুশের সঙ্গে থাকা পূর্ব সীমান্তে মোট ১০ হাজার সেনা মোতায়েন করবে পোল্যান্ড। খবর ইনফোমাইগ্রেন্টসের
রাষ্ট্রীয় বেতারকে মারিউস ব্লাসজ্যাক বলেন, ‘এসব সেনাদের মধ্যে সীমান্ত পুলিশের সরাসরি চার হাজার সদস্য সহায়তা কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকবে। বাকি ছয় হাজার অন্যান্য বাহিনী থেকে নিযুক্ত থাকবে।’
এই ঘোষণাটি সীমান্তে অতিরিক্ত দুই হাজার সেনা মোতায়েনের প্রাথমিক ঘোষণার মাত্র ২৪ ঘন্টা পরে এসেছে। রাশিয়ার মিত্র দেশ বেলারুশ ও ইইউ সদস্য দেশ পোল্যান্ডের মধ্যে চলমান উত্তেজনা ও সম্ভাব্য অভিবাসন সংকটের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে বুধবার ৯ আগস্ট পোলিশ স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী ম্যাকিয়েজ ওয়াসিক আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় দুই হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের ঘোষণা করেন। প্রাথমিকভাবে চলতি সপ্তাহের শুরুতে পোল্যান্ডের সীমান্তরক্ষীরা সরকারকে এক হাজার সেনা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছিল। কিন্তু সেটি এখন বেড়ে ১০ হাজারে গিয়ে ঠেকেছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ঘোষিত ১০ হাজার সেনা মিনস্কের বিরুদ্ধে একটি শক্ত প্রতিরোধ হিসেবে কাজ করবে। বেলারুশে রাশিয়ান ভাগনার গ্রুপের হাজার হাজার ভাড়াটে সেনার আগমনের পর পোল্যান্ড সীমান্তে উস্কানির আশঙ্কা বেড়েছে। গত সপ্তাহে দুটি বেলারুশীয় হেলিকপ্টার পোলিশ আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।’
পোল্যান্ডের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আন্দ্রেজ ক্রুসিস্কি লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রীয় বেতার এলআরটিকে বলেছেন, ভাগনারকে ঘিরে চারপাশে আতঙ্ক তৈরি করা ‘অযৌক্তিক’।
তিনি মনে করেন, ‘পোল্যান্ডের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আসন্ন নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে নিরাপত্তাহীনতার অজুহাত ব্যবহার করছে।’
তিনি বিশ্বাস করেন, ‘ভাগনার বাহিনী কোনোভাবে আমাদের জন্য হুমকি নয়। আমাদেরকে অবশ্যই পরিস্থিতি শান্তভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। আমরা সীমান্তকে শক্তিশালী করতে পারি কিন্তু এটি যেন নতুন সমস্যা তৈরি না করে।’
২০২০ সালের বিতর্কিত নির্বাচন ও বিরোধীদের নিপীড়নের অভিযোগে বেলারুশের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ইইউসহ পশ্চিমা দেশগুলো। এর জবাবে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কো চলতি বছরের গ্রীষ্ম থেকে ইইউ সীমান্তে হাজার হাজার অভিবাসীকে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে ইউরোপের দেশগুলো।
৭ আগস্ট পোল্যান্ডের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ জেনারেল টোমাস প্রাগা বলেন, চলতি বছরের শুরু থেকে ১৯ হাজার অভিবাসী বেলারুশ থেকে পোল্যান্ডে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। দেশটির বর্ডার গার্ডের কমান্ডার-ইন-চিফ আরও জানান, ২০২২ সালে বেলারুশ সীমান্ত থেকে প্রবেশের চেষ্টা করা অভিবাসীদের সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার।
অপরদিকে, চলতি বছরের জুলাইয়ে চার হাজারের বেশি মানুষ সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি। পোলিশ উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যাকিয়েজ ওয়াসিক ৩ আগস্ট সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেলারুশের পরিষেবাগুলো অপরাধী গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। তারা অবৈধ অভিবাসনে সহযোগিতা করছে।’
টমাস প্রাগা যোগ করেন, এই কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা বিশাল মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই পরিস্থিতি আমাদের ২০২১ সালের গ্রীষ্মে শুরু হওয়া পরিস্থিতির কথা মনে করিয়ে দেয়। সেই সময় মধ্যপ্রাচ্যের ইরাকসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার অভিবাসী এবং শরণার্থী পোলিশ সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করেছিল।