দেশে অবৈধ গ্যাস-সংযোগের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। এতদিন অবৈধ সংযোগ পেলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শুধু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করত বিতরণ কোম্পানিগুলো। এখন থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্নের পাশাপাশি অবৈধভাবে গ্যাস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আদালতে বা থানায় মামলা দায়ের করা হবে। একই সঙ্গে অবৈধ সংযোগ প্রদানের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ফৌজদারি মামলা ও বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে। অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ ও অবৈধ পাইপলাইন অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
গত ২০ জুন অনুষ্ঠিত এ সভায় জানানো হয়, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ১৫ জুন পর্যন্ত ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৩৮৯টি গ্যাস-সংযোগ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলোর সিংহভাগই আবাসিক। অন্যদিকে প্রায় ৮৯৮ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো থেকে শিল্প, বাণিজ্যিক ও আবাসিক খাতের বিভিন্ন স্থাপনায় বেআইনিভাবে গ্যাস ব্যবহূত হতো। দেড় বছরে নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান শেষে এখনো ৪৫ কিলোমিটারের বেশি অবৈধ পাইপলাইন এবং ৪১ হাজার ৬৪১টি চিহ্নিত অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়নি।
কমিটির এক সদস্য জানান, চিহ্নিত অবৈধ সংযোগের চেয়ে অচিহ্নিত সংযোগ অন্তত তিন গুণ বেশি। এমনকি একটি লাইনে বা স্থানে যে পরিমাণ অবৈধ গ্যাস-সংযোগ রয়েছে বলে বিতরণ কোম্পানিগুলোর প্রকৌশলী-কর্মকর্তারা ধারণা করেন পরে উচ্ছেদ করতে গেলে তার দ্বিগুণও পাওয়া যায়। গ্যাস কোম্পানিগুলোর স্থানীয় অফিসের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারদের যোগসাজশে এবং স্থানীয় রাজনীতিক ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবৈধ গ্যাস ব্যবহারের নেটওয়ার্ক অনেক বেড়ে গেছে। এটি এখনো বড় হচ্ছে।
সভায় উপস্থিত মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের যুগ্ম-সচিব জানান, অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণের ক্ষেত্রে যেসব আইন আছে তা বাস্তবায়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে উদাসীন মনে হচ্ছে। গ্যাস আইনে সুস্পষ্টভাবে অপরাধের ধরন, করণীয় এবং দণ্ডের বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। সে অনুযায়ী কোনো কোম্পানি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার পাশাপাশি অবৈধ সংযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে কোর্টে বা থানায় মামলা করতে হবে। মামলা হলে ওয়ায়েন্ট হবে। পুলিশ অবৈধ গ্রাহককে ধরার জন্য সন্ধান করলে সবাই সচেতন হবে। অন্যরাও অবৈধ সংযোগ নিতে আগ্রহী হবে না।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহ বলেন, অবৈধ সংযোগের একটি তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দিন আগে একটি লাইন ব্লক করা হয়েছিল। ধারণা করা হয়েছিল তাতে ১০ হাজার অবৈধ গ্যাস-সংযোগ থাকতে পারে। কিন্তু দেখা যায় সেখানে ২০ হাজারের বেশি অনুমোদনহীন সংযোগ ছিল। তিতাসের আওতাধীন ৮-১০টি শাখায় কতগুলো অবৈধ সংযোগ আছে তা নির্ধারণ করা যাচ্ছে না।