যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অবৈধ অভিবাসীদের মার্কিন সীমান্ত থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনেজুয়েলা- এ চারটি দরিদ্র দেশ থেকে সীমিতসংখ্যক আইনি অভিভাসীদের আগমনের সুযোগ করে দেওয়ার সময় এমন সতর্ক আহ্বান জানান তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে অভিবাসন এখন খুবই জটিল একটি বিষয় হয়ে উঠেছে। অভিবাসনের বিরোধিতা করে আসা রিপাবলিকান নেতা ও বামপন্থী ডেমোক্র্যাট নেতাদের পক্ষ থেকে ক্রমাগত চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট।
অভিবাসনের সঙ্গে আবার মানবাধিকারের বিষয়টিও জড়িত। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ার আগে ভারসাম্য অবস্থা সৃষ্টি করতে এমন সূক্ষ্ম সিদ্ধান্ত নিলেন জো বাইডেন।
মার্কিন অভিবাসন ব্যবস্থাকে ‘ত্রুটিযুক্ত’ দাবি করে বাইডেন জানান, রোববার (৮ জানুয়ারি) মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে উত্তর আমেরিকান নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের আগে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তবর্তী শহর এল পাসো পরিদর্শন করবেন।
জানা যায়, শীর্ষ ওই সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য হলো সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বাইডেন বলেন, তার নতুন পরিকল্পনার অধীনে টাইটেল ৪২ নামক আইনটিকে আরও সম্প্রসারিত করা হবে, যাতে সীমান্তরক্ষীরা স্থলপথে আসা বিপুলসংখ্যক অভিবাসীদের তাৎক্ষণিকভাবে ফিরিয়ে দিতে পারেন।
হোয়াইট হাউজ থেকে দেওয়া এক ভাষণে অভিবাসন প্রত্যাশীদের উদ্দেশ্য করে জো বাইডেন বলেন, আপনারা সীমান্তে এসে উপস্থিত হবেন না।
হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তাদের দাবি, কঠোর এসব পদক্ষেপ অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীকে পাচারকারীদের মাধ্যমে ভয়ংকর সব পথ পাড়ি দিয়ে সীমান্তে হাজির হওয়া থেকে আটকাবে।
নিজের বামপন্থী সমর্থকদের থেকে আসা চাপ ঠেকাতে বাইডেন ঘোষণা দেন, প্রতি মাসে কিউবা, হাইতি, নিকারাগুয়া ও ভেনিজুয়েলা থেকে ৩০ হাজার অভিবাসী নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে এর জন্য প্রথমে অভিবাসী প্রার্থীদের নিজ দেশ থেকে আবেদন করতে হবে, অবশ্যই মার্কিন স্পন্সর থাকতে হবে ও তাদের সবার জীবনবৃত্তান্ত খুঁটিয়ে দেখা হবে।
জো বাইডেনের দাবি, এ প্রক্রিয়ায় অভিবাসী নেওয়াটা নিরাপদ ও মানবিক। তাছাড়া এটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। তবে প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণরূপে চালু করতে কংগ্রেসকে আইন প্রণয়ন করতে হবে ও অবকাঠাগত তহবিল বাড়াতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদীন ধরে টাইটেল ৪২ আইনটি নিয়ে বিতর্ক চলছে। কারণ, এ আইনের মাধ্যমে যেকোনো প্রকার অভিবাসন প্রত্যাশীকে নোটিশ ছাড়াই দেশ থেকে বের করে দেওয়া যায়। এমনকি, তাদের সীমান্ত থেকেও আটক দেওয়া যায়।
করোনা মহামারিকে সামনে রেখে ২০২০ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এ আইনটি প্রণয়ন করে। তবে করোনা পরবর্তী সময়েও এটি বলবৎ থাকবে কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়।
বাইডেন প্রশাসন আইনটি বাতিল করতে চাইলেও ১৯টি সীমান্তবর্তী অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষ এটি কার্যকর রাখার পক্ষে মত দেয়। শেষ পর্যন্ত গত বছরের ডিসেম্বরে আদালত আইনটি কার্যকর রাখার পক্ষে সিদ্ধান্ত দেন।
যুক্তরাষ্ট্রে গণস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে ১৯৪৪ সালে প্রথম টাইটেল ৪২ আইনটি পাস হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে তা কার্যকর হয় ২০২০ সালে ট্রাম্পের শাসনামলে।