সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি সফল হয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ক্রিকেটের গুগলির মতো সরকার বিএনপির গুগলিতে বোল্ড আউট হয়ে গেছে। লাখ লাখ মানুষ রোদবৃষ্টি উপেক্ষা করে সরকারকে একটি ম্যাসেজ দিয়েছে, তা হলো তোমরা অবিলম্বে গদি ছাড়ো।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, ‘বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। আমরা অনেক দূর এগিয়ে গেছি। এখন ঐক্যবদ্ধ থেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।’
সোমবার (৩১ জুলাই) বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে হামলার প্রতিবাদে ঢাকাসহ সারা দেশে জনসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এটি অনুষ্ঠিত হয়। তবে এই জনসমাবেশ থেকে একদফার দাবি আদায়ে নতুন কোনো কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমান উল্লাহ আমানকে নিয়ে আলোচনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গয়েশ্বর চন্দ্র রায় একজন সিনিয়র রাজনীতিবিদ। তাকে রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। আমান উল্লাহ আমানের ওপর হামলা হয়েছে। এরপরে যে চিত্রনাট্য করা হয়েছে, গল্প তৈরি করে আবার সেসব ভিডিও করা হয়েছে। এতে এরা দুজন ছোট হয়নি, তোমরাই ছোট হয়েছো।’
সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘এদের দেশে বিদেশে কোনো সমর্থন নেই। তাই পরিষ্কারভাবে বলতে চাই- দুইবার জনগণকে ধোঁকা দিয়ে, বোকা বানিয়ে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছে। এবার আর সেই সুযোগ দেওয়া হবে না। এদেশে নির্বাচন হবে। সেটা নির্দলীয় সরকারের অধীনে। দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের এক দফা এক দাবি। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। আগের মতো আর হবে না। বারবার ঘুঘু ধান খেয়ে যাবে তা হবে না। অন্যায় অত্যাচার করে কোনো লাভ হবে না।’
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এখনো সময় আছে আমাদের দাবির বিষয় চিন্তা-ভাবনা করুন। জনগণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবেন না। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করতে চাই। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন। গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দিন। অন্যথায় পালানোর পথ খুঁজে পাবেন না।’
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক মো. আবদুস সালাম।
মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের পরিচালনায় জনসমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা বরকতুল্লাহ বুলু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নুল আবদিন ফারুক, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, কামরুজ্জামান রতন, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, রকিবুল ইসলাম বকুল, মীর সরফত আলী সপু, শিরিন সুলতানা, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, কৃষক দলের শহীদুল ইসলাম বাবুল, ওলামা দলের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক খান, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, মৎস্যজীবী দলের মো. আবদুর রহিম।
অন্য নেতারা যা বললেন
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ‘বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সত্যিকারের চরিত্র আবারো জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। কারণ এরা একদলীয় সরকার। এজন্যই কাউকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। মিডিয়াকে কিছুই লিখতে দেয় না। এরাই অতীতে বাকশাল কায়েম করেছিল। আজকে আবার বাকশাল কায়েম করেছে। এরা হচ্ছে লগি-বৈঠা ও ধোঁকাবাজির সরকার। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকার। সংবিধান লঙ্ঘনের সরকার। মামলা-হামলার সরকার। মুখে বলে গণতন্ত্র আর দেশে স্বৈরাচার কায়েম করেছে। সুতরাং এরা গদিতে থাকতে পারে না। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিতাড়িত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ভালো ভালো সালাম দিয়ে চলে যান। না হলে চলে যেতে বাধ্য হবেন। তখনই হবে নাটকের শেষ। যত দ্রুত যাবেন ততই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে।’
স্থায়ী কমিটির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলছে এবং চলবে। প্রয়োজনে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। যারা আমাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে বাধা দেবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ কিন্তু বসে থাকবে না।’
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতেও পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা ও সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে অনেক নেতা-কর্মীকে আহত ও গ্রেফতার করেছে। তারা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি কীভাবে বানচাল করা যায় সেভাবেই পরিকল্পনা করেছিল। আসলে আমাদের কর্মসূচি বানচাল করতে গিয়ে নিজেরাই বানচাল হয়ে গেছে। তারা এখন গায়েবি মামলা দিচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘পুলিশ আমাদেরকে ২১/২৩টি শর্তে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। তার একটি শর্ত দিয়েছে কোনো সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। কারণ সারাদেশের মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করছেন সেই তারেক রহমান। সেজন্যই তার বক্তব্য প্রচার না করার শর্ত দিয়েছে। কারণ দেশের আকাশে বাতাসে তারেক রহমানের নাম। পদ্মা মেঘনার প্রবল ঢেউয়ে তারেক রহমানের নাম।’
সভাপতির বক্তব্যে মো. আবদুস সালাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা নিজেরাই আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করলো, বাসে আগুন দিলো আর আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দেওয়া হয়েছে! এই হলো আওয়ামী লীগ! ওরা কুড়াল নিয়ে আসলো সেটা নিয়ে পুলিশ কিছু বলল না? এখন তারেক রহমানের বক্তব্য শোনে আওয়ামী লীগের মাথা খারাপ। এই সরকারের সঙ্গে চোর ডাকাত ও লুটেরা ছাড়া কেউ নেই। আমরা বারবার মাইর খেয়ে যাবো সেটা আর হবে না। এজন্য তো মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করিনি।’