চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা কবে হবে বা আদৌ হবে কি না, সেটি এখন আর কেউ জানে না। করোনার কারণে এক বছরের বেশি সময় ধরে ক্লাস না হওয়ায় সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচিতে গত ৩০ মার্চ থেকে ৬০ দিন শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করিয়ে এসএসসি এবং ৮০ দিন ক্লাস করিয়ে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সেটিও ভেস্তে গেছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বলা যাবে না কবে এই পরীক্ষা হবে। আবার গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষার মতো পরীক্ষা ছাড়াই মূল্যায়ন করা হবে কি না, সেটি নির্ভর করছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব তপন কুমার সরকার বলেছেন, তাঁরা এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ, প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও ছাপার কাজটি এগিয়ে রাখছেন। প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন, যাতে কোনো সিদ্ধান্ত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। বিগত প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে এসএসসি পরীক্ষা ফেব্রুয়ারিতে এবং এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এপ্রিলের শুরুতে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। ফলে পরীক্ষা দূরে থাক, যারা পরীক্ষা দিত, তারা এক বছরের বেশি সময় ধরে শ্রেণিকক্ষেই যেতে পারছে না।
মাঝে করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রথমে গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিকক্ষ খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এ জন্য এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য সংক্ষিপ্ত পাঠ্যসূচি প্রণয়নও করেছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের উচ্চপর্যায় তাতে সায় দেয়নি। এরপর সরকার ঘোষণা দেয়, ৩০ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে এবং তখন থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ৬০ দিন ক্লাস এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ৮০ দিন ক্লাস করিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। কিন্তু করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত থেকেও সরে আসতে হয়েছে সরকারকে। নতুন সিদ্ধান্ত হলো ২৩ মে থেকে স্কুল-কলেজ খোলা হবে এবং ২৪ মে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের পরিকল্পনা ছিল ৬০ দিন ক্লাস শেষে আগামী জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে এসএসসি পরীক্ষা শুরু করা এবং এসএসসি পরীক্ষা শেষে দুই মাস বিরতি দিয়ে সেপ্টেম্বরে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া। এ লক্ষ্যে তাঁরা সময়সূচি ঘোষণা করতে চাইছিলেন। কিন্তু এখন সব পরিকল্পনাই বাদ দিতে হয়েছে।
ফরম পূরণের সময় পেছাবে
ঢাকা বোর্ডের সচিব তপন কুমার সরকার বলেন, অনিশ্চয়তা থাকলেও তাঁরা প্রস্তুতি নিয়ে রাখছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১ এপ্রিল থেকে অনলাইনে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ শুরু হয়, যা শেষ হওয়ার কথা ছিল ৭ এপ্রিল। তবে এখন ‘লকডাউনের’ কারণে ফরম পূরণের সময় বাড়ানো হবে। লকডাউন শেষে বর্ধিত সময় জানিয়ে দেওয়া হবে। এ জন্য পরীক্ষার্থীদের বাড়তি ফি দিতে হবে না। ফরম পূরণের পাশাপাশি এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে সেগুলো মডারেট করে ছাপার জন্য বিজি প্রেসেও পাঠানো হয়েছে। সচিব বলেন, বিকল্প কোনো চিন্তা করলেও ফরম পূরণ করতেই হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গত বছরের এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি। তখন বিশেষ ব্যবস্থায় পরীক্ষার্থীদের জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে ফল মূল্যায়ন করা হয়েছে, যাঁরা এখন উচ্চশিক্ষার পথে পা বাড়াচ্ছেন।
আগামী বছরের পরীক্ষার্থীরা আরও বিপাকে
নবম ও দশম শ্রেণির মোট পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এসএসসি এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। আগামী বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা গত বছরের জানুয়ারিতে নবম শ্রেণিতে ওঠার পর অল্প কয়েক দিন ক্লাস পেয়েছিল। কিন্তু দশম শ্রেণিতে উঠে কোনো ক্লাসই পায়নি। একইভাবে আগামী বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরাও ক্লাসে পিছিয়ে গেছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে ক্লাস ছাড়া আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনজুর আহমদের পরামর্শ, করোনার কারণে শিক্ষার দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হচ্ছে, এটি মাথায় নিয়ে কয়েক বছরের জন্য শিক্ষা উদ্ধার কর্মসূচি হাতে নিতে হবে।