লক্ষ্মীপুরে অডিও রেকর্ড শুনে বৃদ্ধ আবু ছিদ্দিক (৭৩) ও স্ত্রী আতরের নেছার (৬৫) খুনের আড়াই মাস পর রহস্য উদঘাটন করছে পুলিশ। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৬ আসামিকে গ্রেফতার হয়েছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফ তাঁর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে জেলার কর্মরত সাংবাদিকদের প্রেস বিফ্রিং করে এ জোড়া খুনের রহস্য উদঘাটনের বর্ণনা তুলে ধরেন।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- কামরুল হাসান, রুবেল, জুয়েল, কাওছার হোসেন ও আবুল কাশেম খোকন প্রকাশ দুদু। ও অপর এক আসামি বাহার সেই মাদক মামলায় কারাবন্দী রয়েছে। সেই ও এ মামলার আসামি।
পুলিশ সুপার আশরাফ জানান, খুনের কয়েকদিন আগে আবুল কাশেম খোকন ওরফে দুদু অপর আসামিদের তথ্য দেন। বৃদ্ধ আবু ছিদ্দিকের ঘরে জমির বিক্রির টাকা ও স্বর্ণ অলংকার রয়েছে। তারা প্রায় সময় বৃদ্ধ আবু ছিদ্দিকের ঘরের পাশে বসে আড্ডা ও মাদক সেবন করত। আড্ডা থেকে তারা পরিকল্পনা করে আবু ছিদ্দিকের ঘর থেকে নগদ টাকা ও স্বর্ণ অলংকার লুট করবে। দুইদিন পর রাতের অন্ধকারে বৃদ্ধ আবু ছিদ্দিকের বাসার ছাদের দরজা ভেঙে খুনি কামরুল হাসান, রুবেল ও বাহার ভেতরে প্রবেশ করে।
ওই সময় তাদের উপস্থিতির টের পায় স্ত্রী আতরের নেছা। তখন খুনিরা স্বামী-স্ত্রীর মুখ চেপে ধরে এবং একটি কাপড় দিয়ে আবু ছিদ্দিকে বেঁধে ফেলে। এবং বাহির থেকে দুদু সাহস দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর খুনিরা বুঝতে পারেন, স্বামী-স্ত্রীর কোনো সাড়া শব্দ নেই, দুইজনে মারা গেছে। তখন দ্রুত তারা বাসা থেকে ছাদ দিয়ে বের হয়ে যায়। কিন্তু বাসায় তারা টাকা ও স্বর্ণ অলংকার কিছুই পায়নি। দুইদিন পর পুলিশ স্বামী-স্ত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে পুলিশ চরম হিমশিম খেতে হয়। পরে বিষয়টি জুয়েল ও কাওছার বুঝতে পারেন নিশ্চয়ই এ ঘটনা কামরুল, রুবেল ও বাহার ঘটিয়েছে। তখন তারা সবাই আবার একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে জুয়েল ও কাওছার তাদের ভাগ টাকা দাবি করেন। এনিয়ে উভয়পক্ষ কথা কাটাকাটি হয়। তাদের বৈঠকের একটি অডিও রেকর্ড চলে যায় পুলিশের হাতে। এরপর পুলিশ অনুসন্ধানে নামেন। এরমধ্যে আত্মা-গোপনে চলে যায় সকল আসামি। আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রাখছে।
দীর্ঘ চেষ্টার পর পুলিশ সোমবার (৯ জানুয়ারি) রাতে আসামি কামরুল হাসান গ্রেফতার করে। পরে কামরুল হাসান আদালতে ১৪৬ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়।
প্রেস বিফ্রিং এ উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোহেল রানা ও মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মোসলেহ উদ্দিন।
উল্লেখ্য: ২০২২ সালের ১৭ অক্টোবর রাত ১০টার দিকে পুলিশ সদর উপজেলার শাকচর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের শাকচর গ্রাম থেকে স্বামী-স্ত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করে। ওই বাসায় স্বামী-স্ত্রী একাই বসবাস করতেন।