তিনি বলেন, দেশের জনগণ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে জনগণ ডামি নির্বাচন বর্জন করে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এর সাথে জড়িত প্রক্রিয়া, ব্যক্তি, ফলাফল, শপথ, সংসদ, সরকার সবকিছুই প্রত্যাখ্যাত, অগ্রহণযোগ্য।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই সরকার গঠনের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী আরও বলেন, ভুয়া ভোট শেষ হতে না হতেই শেখ হাসিনা নিশিরাতের সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই গেজেট জারি, তড়িঘড়ি শপথ ও নজিরবিহীন দ্রুততায় সরকার গঠনের ঘটনা প্রমাণ করে এক অজানা ভীতি—আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাকে। সমস্ত কিছু অবৈধ-ভুয়া আর জালিয়াতির আবর্তে তাসের ঘরের ওপর সিংহাসন পাতলে এমন নির্ঘুম অনিশ্চয়তা আতঙ্কে জীবন পতিত হয়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার এই মন্ত্রিসভা নিয়ে আমরা কি বলব? এটা ডামি… এই মন্ত্রিসভা নিয়ে কথা বলতে চাই না। যদি একটা বৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে কিছু হতো তাহলে বলা যেতো। এটা তো সব দিক থেকে থেকে বর্জন করেছে জনগণ।বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ গ্রহণ,. শমশমমমশমশমমমমমমমমমশমশমমমশমশমমকরে। রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করান।
২৮ অক্টোবর সমাবেশের ঘটনায় টানা ৫৭দিন বন্ধ থাকা নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় খোলার পর এই প্রথম সংবাদ সম্মেলন করলেন রিজভী। এর আগে, তিনি আত্মগোপনে থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের বক্তব্য উপস্থাপন করতেন।
তিনি বলেন, আবারো অনেকদিন পরে আপনাদের সাথে দেখা হলো। আমরা জানি না, আমাদের পরিস্থিতি পরিণাম কি হবে? আমরা আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে আছি। আপনারা এর মধ্যেও সহযোগিতা করেছেন এজন্য আমি কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
রিজভী বলেন, ৭ জানুয়ারি তথাকথিত নির্বাচনটি ছিল গণতন্ত্রকামী জনগণের আন্দোলনের পক্ষে এবং ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার ডামি নির্বাচন বর্জনের পক্ষে একটি সুস্পষ্ট গণরায়। এই ডামি সরকার ওয়ান ইলেভেনের ধারাবাহিকতা মাত্র।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির এই দিনে গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশার মাধ্যমে দেশটাকে প্রভুদের করদ রাজ্যে পরিণত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো, তারই ধারাবাহকতায় আবারও সেই একই দিনে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করল ডামি ভোটের অসাংবিধানিক, প্রভুদের আজ্ঞাবাহী হাসিনার সরকার। দেশকে তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র তারা সফল করল। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব গণতন্ত্রের বিনিময়ে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশালের দ্বিতীয় সংস্করণ চালু করলেন শেখ হাসিনা। বিদেশি পত্র-পত্রিকা মিডিয়া এবং রাজনীতি বিশ্লেষকরা সোচ্চার কন্ঠে বলছে, বাংলাদেশে একতরফা একদলীয় ডামী নির্বাচনের মাধ্যমে একদলীয় রাষ্ট্র কায়েম করেছেন শেখ হাসিনা। এটা বাকশাল ২.০।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের পরাজিত নেতারাই শেখ হাসিনাকে অবৈধ ভোটের প্রধানমন্ত্রী উপাধি দিচ্ছেন। এবার যে নির্বাচনের নামে ভোট ডাকাতি হয়েছে তা নিজেরাই সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরছেন। সংসদে বিদ্যুৎ বিক্রি করা এক গানের শিল্পী বলেছেন, মৃত মানুষ বিদেশে আছে তাদের ভোটও দেওয়া হয়েছে, আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ও দলটির প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেছেন, নির্বাচনে অলৌকিক শক্তি কাজ করায় ভোটে কারচুপি হয়েছে… একচেটিয়া ভোট ডাকাতি হয়েছে। বরগুনা—১ আসনের আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেছেন, ভোটের ফল একহাতে তৈরি করা হয়েছে… একজন বলেছেন, গনভবন থেকে ফলাফল এসেছে। পরাজিত কুইন্সপার্টির এক নেতা বলেছেন, শেখ হাসিনা তামাশার নাটক করেছেন।
তিনি বলেন, কাকে কত টাকা দিয়ে নির্বাচনে নেওয়া হয়েছে তা প্রকাশ্যে হিসাব দিচ্ছেন পরাজিত প্রার্থীরা। থলের বিড়াল সব বেরুচ্ছে আস্তে আস্তে। সব অপকর্মের খবর ফাঁস করছে। এতো দিন বাংলাদেশ তথা বিএনপি বলেছে শেখ হাসিনা ভোট ডাকাত আর এখন আওয়ামী লীগের লোকজনই বলছে “শেখ হাসিনা ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট ডাকাত”।
রিজভী বলেন, বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্রের আকাঙ্খার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। প্রতারণার মাধ্যমে শেখ হাসিনার উপহার দেওয়া দিবানিদ্রায় থাকা নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ভেজাল নির্বাচন ও কন্ঠরোধের গণতন্ত্র তারা প্রত্যাখান করেছে। বিরোধীদের সমালোচনার ওপর সরকারের বুলডোজার চালানোর ঘটনা সর্বজনবিদিত। এই প্রতারণার ডামি নির্বাচনকে কেউ স্বীকৃতি দেয়নি।
রিজভী বলেন, অচিরেই এই সরকার চোরাবালিতে হারিয়ে যাবে। কারণ এরা অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য নিপীড়ণের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে বিশ্ব মানবতার শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এদের নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচার ও উৎপীড়নের কাহিনী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। যেহেতু জনসমর্থনহীন সরকার জবাবদিহিতার ধার ধারে না, সেহেতু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিনকে দিন বেপরোয়া ও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এরা এমন একটি দুর্নীতির সংস্কৃতি তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে তারা কল্পস্বর্গ বানিয়ে আনন্দে আত্মহারা।
রিজভী বলেন, ‘অনেকেই অসুস্থ… দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তারা গুরুতর অসুস্থ। কিন্তু তারা চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এরকম অসংখ্য নেতা-কর্মী অসুস্থ। আমাদের সহ প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম আমি খবর পেয়েছি প্রচন্ড অসুস্থতায় ভুগছেন কারাগারের মধ্যে। তার উপরে অনেকবার নিপীড়ন নির্যাতন হয়েছে… তাকে ফেলে দিয়ে পায়ের ওপর বুট দিয়ে খোঁচানো হয়েছে। সে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিতে যাওয়ার সময়ে শর্টগানের গুলিতে তার পা ঝাঝরা… প্রচন্ড অসুস্থ সে। কিন্তু তার জন্য কোনো ধরনের চিকিৎসা নেই… সে সেখানে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারের দমনপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ২১৬ জন নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মামলায় আসামি করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ঢাকা জেলা সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম, তারিকুল ইসলাম তেনজিং, আমিনুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিনের নাদিয়া পাঠান পাপন, ড্যাবের তৌহিদ আউয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।ৎ