অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। টিকা গ্রহীতাদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধাসহ সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগের কারণে ইউরোপের বেশ কয়েকটি বড় বড় দেশ টিকা প্রয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত করার প্রেক্ষিতে এই আহ্বান জানাল সংস্থাটি।
সংস্থাটির দাবি, অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকা নেওয়ার সঙ্গে মানবদেহের রক্ত জমাট বাঁধার কোনো সংশ্লিষ্টতা এখনও পাওয়া যায়নি। ডেনমার্ক, নরওয়ে, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের পথ ধরে সর্বশেষ জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেনও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রয়োগ নিষিদ্ধ করেছে।
এই সিদ্ধান্তকে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করে দেশগুলো জানিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে টিকার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ডব্লিউএইচও’র ভ্যাকসিন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা অ্যস্ট্রাজেনেকার টিকার বিষয়ে আলোচনা করতে মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বৈঠকে বসছেন। টিকা ইস্যুতে একইদিন বৈঠকে বসছে ইউরোপীয়ান মেডিসিন এজেন্সিও (ইএমএ)। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে সংস্থাটি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার বিষয়ে হয়তো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে।
এর আগে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার সঙ্গে টিকা গ্রহীতার শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকির কোনো ইঙ্গিত নেই বলে জানিয়েছিল সংস্থাটি। গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ইএমএ জানায়, টিকা নেওয়ার কারণে রক্ত জমাট বেঁধে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। এমনকি এটা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও তালিকাভুক্ত করা হয়নি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘যে ঝুঁকির কথা বলা হচ্ছে; এর থেকে আসলে টিকা নেওয়ার লাভই বেশি। করোনার টিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে এবং একইসঙ্গে টিকা নেওয়ার সঙ্গে শরীরের রক্ত জমাট বাঁধার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা- সে বিষয়ে তদন্তও অব্যাহত থাকবে।’
এদিকে অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে, ব্রিটেন ও ইউরোপজুড়ে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ তাদের তৈরি করোনার টিকা নিয়েছেন এবং এর মধ্যে মাত্র ৪০ জনেরও কম মানুষের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ডব্লিউএইচও’র মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমায়ার জানিয়েছেন, তার সংস্থাটি এখন এসব রিপোর্টগুলো খতিয়ে দেখছে। তিনি জানান, ‘টিকা নেওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার ঘটনা তদন্ত করছে ডব্লিউএইচও। তদন্তে কোনো খারাপ কিছু পাওয়া গেলে সেটা সঙ্গে সঙ্গেই মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
তার দাবি, ‘এসব (রক্ত জমাট বাঁধার) ঘটনা যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেওয়ার কারণেই ঘটছে; আজ পর্যন্ত এমন কোনো তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে নেই। আর তাই টিকা প্রয়োগের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া উচিত।’