সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা ও ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি বয়ে গেছে। কোথাও কোথাও ঘণ্টায় প্রায় ৬০ কি.মি. গতিতে আঘাত হেনেছে কালবৈশাখী ঝড়। রোববার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর শুরু হওয়া এই তাণ্ডবে সারাদেশে নিহত হয়েছেন ১১ জন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে।
গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, গাইবান্ধায় কালবৈশাখী ঝড়ে তিন নারী ও এক শিশুসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বেলা ৩টার দিকে গাইবান্ধার সদর, সুন্দরগঞ্জ, পলাশবাড়ী, ফুলছড়ি ও সাদুল্লাপুরে কালবৈশাখী ঝড়ে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
ঝড়ে নিহতরা হলেন- পলাশবাড়ী উপজেলার বেতকাপা ইউনিয়নের মোস্তাফুর গ্রামের গোফফার রহমান, ডাকেরপাড়া গ্রামের জাহানারা বেগম ও মনোহরপুর ইউনিয়নের কুমেদপুর গ্রামের মমতা বেগম (৫৫)। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের দোয়ারা গ্রামের ছোলায়মান মিয়ার স্ত্রী ময়না বেগম (৪০)। ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারি গ্রামের বিটুল মিয়ার স্ত্রী শিমুলী আক্তার (২৭)। সাদুল্লাপুর উপজেলায় আব্দুস সালাম সর্দার নামে এক ব্যক্তি ঝড়-আতঙ্কে মারা গেছেন।
এদিকে ঝড়ে আহত হওয়ার পর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানোর পথে দুজনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন সদর উপজেলার তিনগাছের তল এলাকার হিরু মিয়ার শিশুসন্তান মনির মিয়া (৫) ও ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডাবাড়ি গ্রামের হারিস উদ্দিন (৩৫)।
ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, আলফাডাঙ্গায় বছরের প্রথম কালবৈশাখী ঝড়ে গাছের ডাল পড়ে মা-মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার বানা ইউনিয়নের টাবনী ঘোষবাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, মধুখালী উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের মো. জাহিদের স্ত্রী হালিমা (২৫) তার এক বছর চার মাস বয়সী শিশুকন্যা আফছানাকে নিয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলার বানা ইউনিয়নের শিরগ্রামে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যান। সেখান থেকে সন্ধ্যায় ভ্যানযোগে তার বাবার বাড়ি বুড়াইচ ইউনিয়নের পাকুড়িয়া রওনা দেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বানা ইউনিয়নের টাবনী ঘোষবাড়ির সামনে পৌঁছালে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। এ সময় সজনে গাছের একটি বড় ডাল তাদের ওপর ভেঙে পড়ে। এতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই হালিমা মারা যান। মারাত্মক আহত শিশু আফছানাকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, ভেড়ামারা উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে নির্মাণাধীন দোকানঘরের উড়ন্ত টিনে গলা কেটে রবিউল ইসলাম (৪০) নামের এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় ভেড়ামারা উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের মহিশাডরা এলাকার দফাদার ফিলিং স্টেশনের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত রবিউল ইসলাম কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার হোগলবাড়িয়া ইউনিয়নের শশিধরপুর এলাকার সাদ মন্ডলের বড় ছেলে। রবিউল পেঁয়াজের ব্যবসা করতেন। তিনি তিন মেয়ে সন্তানের জনক। এদিকে মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-পথে রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ছোট বড় সব ধরনের ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। প্রায় ২ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফেরি ও লঞ্চ চলাচল শুরু হয়।
ঢামেক প্রতিনিধি জানান, রাজধানীতে হঠাৎ বয়ে যাওয়া ঝড়ে শিশু তুয়া (৪), সায়মা আক্তার (৩৭) নামে এক নারী ও ফরিদ (৩৫) নামে এক রিকশাচালকসহ তিনজন আহত হয়েছেন। তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় হঠাৎ ঝড়ে তুবার মাথায় টাইলস পড়ে এবং ফুটপাতে খাবার খাওয়ার সময় দেয়াল ধসে ফরিদ আহত হন।
কালবৈশাখী ঝড়ে নাটোরে বিকেল ৪টার দিকে পৌর সদরের কামারপাড়া ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় চলন্ত একটি প্রাইভেটকারের ওপর বেল গাছের মোটা ডাল ভেঙে পড়ে। নাটোর প্রতিনিধি জানান, এ সময় গাড়িটি ধীরগতিতে চললেও সামনের গ্লাস ও ছাদে বৈদ্যুতিক খুঁটির তার ছিঁড়ে গাছের ডালটি ভেঙে পড়ে। তবে গাড়িচালক সুমন, তার স্ত্রী, শিশু সন্তানসহ একই পরিবারের ৫ জন প্রাণে বেঁচে গেছেন। ঝড় কমলে বিকেল ৫টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাছের ডাল কেটে গাড়িটি উদ্ধার করেন।
এদিকে ঝড়ে সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকায় হঠাৎ দমকা ও ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির কারণে ঢাকায় নামতে পারেনি যাত্রীবাহী চারটি ফ্লাইট। এদের মধ্যে তিনটি চট্টগ্রামে এবং একটিকে ভারতের কলকাতা বিমানবন্দরে পাঠানো হয়েছে। ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানায়, সন্ধ্যায় বরিশাল থেকে আসা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস-১৭৪ ফ্লাইটটি ঝড়ের কারণে ঢাকার আকাশে ঘুরে নামতে না পেরে চট্টগ্রামে চলে যায়।
ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বইমেলা। রোববার সন্ধ্যার দিকে বয়ে যাওয়া ঝড়ে অমর একুশে বইমেলার চেনা রূপ অনেকটাই অচেনা হয়ে যায়। ঝড়ের সময় বইমেলায় পাঠক ও প্রকাশকরা ছিলেন। তীব্রতা দ্রুত বেড়ে গেলে পাঠকদের অনেককে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে দেখা যায়। তবে ঝড়ের কবল থেকে বই রক্ষায় স্টলের কর্মীরা আপ্রাণ চেষ্টা করেন।