বাজারে অস্থিরতা কমাতে সরকার তিন পণ্য আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম বেঁধে দিলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাওরান বাজার, শান্তিনগর ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, নির্ধারিত দরের চেয়ে অনেক বেশিতে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলেছেন, তারা সরকারের নির্ধারিত এ দর সম্পর্কে কিছু জানেন না। আবার কেউ কেউ বলেছেন, সরকার যে দরে ডিম, আলু, পেঁয়াজের দর নির্ধারণ করেছে তাতে বিক্রি করা সম্ভব নয়। কারণ, পাইকারিতেই এসব পণ্যের দাম বেশি। উল্লেখ্য, গত কিছুদিন ধরেই পণ্য তিনটি নিয়ে বাজারে অস্থিরতা চলছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণেই তিনটি পণ্যের দামই লাগামহীনভাবে বেড়েছে। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষকে।
দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হঠাত্ করে অনেক বেড়ে গেছে। গত আগস্টে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। জুলাইয়ে এ হার ছিল ৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থাত্, আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ২ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের উত্পাদন, চাহিদা ও মূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক বৈঠকে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দর নির্ধারণ করে দিয়েছে। বেঁধে দেওয়া দর অনুযায়ী, খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম হবে সর্বোচ্চ ১২ টাকা অর্থাৎ এক হালি ৪৮ টাকা, প্রতি কেজি আলু ৩৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৬৫ টাকা। কিন্তু দর বেঁধে দেওয়ার পরের দিন গতকাল বাজারে গিয়ে নির্ধারিত দরে কোনো পণ্য বিক্রি হতে দেখা যায়নি।
বেঁধে দেওয়া দর প্রসঙ্গে তুরাগ এলাকার নতুন বাজারের এক বিক্রেতা বলেন, সরকার যে ডিম, আলু, পেঁয়াজের দর নির্ধারণ করে দিয়েছে তাতো আমরা জানি না। সেই বিক্রেতাকে বেঁধে দেওয়া দরের কথা জানালে তিনি বলেন, এই দরে কীভাবে বিক্রি করব? পাইকারি বাজারে, আড়তে এসব পণ্যের দাম বেশি। সেখানে দাম না কমলে খুচরা বাজারে কীভাবে কমবে? একই কথা জানালেন, কাওরান বাজারের এক খুচরা ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আড়ত থেকে যে দরে ডিম কিনি তাতে প্রতি হালিতে সামান্য মুনাফায় বিক্রি করি। তাহলে সরকার যে দর নির্ধারণ করেছে সে দরে কীভাবে বিক্রি করব?
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেছেন, যেসব ব্যবসায়ী আলু সংরক্ষণ করেছেন, তারা দাম বাড়াচ্ছেন। খুচরা বাজারে আলুর দাম ৩৬ টাকা কেজির বেশি হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, বাজার তদারকিতে সরকারের গাফিলতি আছে। তদারকির নামে সরকারি কর্মকর্তারা ফোন করে আলুর বাজারের তথ্য নিচ্ছেন, সরাসরি বাজারে গিয়ে খোঁজ নেন না। বিশেষ করে হিমাগারগুলোতে সরাসরি তদারকি না করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পণ্য তিনটির নির্ধারিত দর বাস্তবায়নে খুচরা বাজারে অভিযান চালিয়ে তখনই বেশি সুফল পাওয়া যাবে যখন পাইকারিবাজার, আড়তদারদের ধরা হবে। সেখানে কঠোর অভিযান না চালালে নির্ধারিত দর বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন হবে। কারণ, এর আগে সয়াবিন ও চিনির দর বেঁধে দেওয়া হলেও তা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘পণ্যের দাম বেঁধে দিলেও অনেক সময়ই সরকারের পক্ষে সারা দেশে তদারকি করা সম্ভব হয় না। এজন্য দর বেঁধে দিয়েও অনেক সময়ই কোনো লাভ হয় না’। তিনি বলেন, ‘এখন তো আন্তর্জাতিক বাজারে অনেক পণ্যের দাম কমছে। এছাড়া যে পণ্যগুলোর দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে তা সবই এদেশের পণ্য। এসব পণ্যের দাম তো এত বেশি বাড়ার কথা নয়। এখানে একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। এই সিন্ডিকেট সরকারকে ভাঙতে হবে। একই সঙ্গে ভোক্তারা যদি এ বিষয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে যে—আমি কিছুদিন পেঁয়াজ খাব না বা ডিম খাব না।—যেটা অনেক দেশেই নয়। এ রকম হলে পণ্য নিয়ে কারসাজি কম হবে।’