নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবে যাওয়া রাবিত আল হাসান লঞ্চ থেকে এ পর্যন্ত ৫ নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লঞ্চটিতে ৪৬ জন যাত্রী ছিলেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লা্হ। তিনি জানান, উদ্ধার করা ৫ মৃতদেহ ছাড়াও ২০ জন সাঁতরে পাড়ে উঠতে পেরেছেন। বাকি ২১ জন এখনও নিখোঁজ। মৃত ও নিখোঁজদের পরিবার সদস্যদের আহাজারিতে নদীর ওই এলাকার পরিবেশ মাঝরাতেও ভারী হয়ে আছে। পরিবারের উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় এসে ডুবে যাওয়া লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করেছে। এখন চলছে লঞ্চটি উদ্ধার চেষ্টা।
রবিবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একটি কার্গো জাহাজের আঘাতে লঞ্চটি ডুবে যায়। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লা্হ জানান, নারায়ণগঞ্জের জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে বিআইডব্লিউটিএ, পুলিশ ও উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে ৭ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে পদবি নির্ধারিত হলেও কারা তদন্ত কমিটিতে থাকছেন তা তাৎক্ষণিক নির্ধারণ করা হয়নি।
এদিকে, একই ঘটনায় চার সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। জেলা প্রশাসক আরও জানান, বিআইডব্লিউটিএ তাকে নিশ্চিত করেছে, ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে ৪৬ জন যাত্রী ছিল। এরমধ্যে ৫ জনের মৃতদেহ কোস্টগার্ড ও ফায়ার সার্ভিস এরইমধ্যে উদ্ধার করেছে। তারা সবাই নারী। এছাড়াও ২০ জন সাঁতরে পাড়ে উঠতে পেরেছেন। বাকি ২১ জন এখনও নিখোঁজ। যারা সাঁতরে পাড়ে উঠতে পেরেছেন স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসনের সহায়তায় তাদের নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন এখনও চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিরা এখনও নিখোঁজ।
তিনি আরও জানান, নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে লাশ বহন ও দাফন কাজের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসকের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী কমপক্ষে ২১ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তারা বেঁচে আছেন কিনা, বা কোনোভাবে পারে উঠেছেন কিনা তা কেউ বলতে পারছে না। তবে অনেকের ধারণা, যদি প্রাণে বাঁচতে না পারেন তাহলে ওই সময়ে প্রচণ্ড ঝড় থাকায় মৃতদেহগুলো নদীর এই এলাকায় না থেকে অন্যদিকে ভেসে যেতেও পারে। আবার লঞ্চের ভেতরে আটকে থাকতে পারে।
এদিকে, উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় ঘটনাস্থলে এসেছে। এ জাহাজের ডুবুরি ও কর্মকর্তারা লঞ্চটি উদ্ধারে তৎপরতা চালাচ্ছে। এরইমধ্যে লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করেছে। তবে শুরু থেকেই বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ পুলিশ উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। পরে কোস্টগার্ডও এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন তাদের সার্বিক সহায়তা দিচ্ছে। মৃতদেহগুলো কোস্টগার্ডের ডুবুরিরা উদ্ধার করেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। রাতেও প্রত্যয় জাহাজের নেতৃত্বে উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।
লঞ্চটিতে যেসব যাত্রী ছিলেন তাদের স্বজনরা এরইমধ্যে ওই নদীর প্রান্তে এসে উপস্থিত হয়েছেন। তাদের আহাজারিতে নদীর পারে মাঝ রাতেও বিরাজ করছে শোকাবহ পরিবেশ। যথাযথ পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাদের কাছে মরদেহগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। জানার চেষ্টা চলছে নিখোঁজদের পরিচয়।